এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন শুধু একপেশেই নয়, মিথ্যায় ভরপুর: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
ফাইল ছবি

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনটি শুধু একপেশেই নয়, এটি মিথ্যায় ভরপুর বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার রাতে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডব্লিউর ‘বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০২০’-এ বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে আইনমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। ৭৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে প্রায় ১০০ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গুমের ঘটনার প্রমাণ নিয়ে জাতিসংঘ, দাতা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত উদ্বেগগুলো খারিজ করে দিয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনাকারী নাগরিক অধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও এমনকি শিশুদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে মানবাধিকার সংগঠনটির প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গ্রেপ্তারের আগে তিনি অসুস্থ ছিলেন। সে জন্য তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ওই সুরতহাল প্রতিবেদন কিন্তু চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।

কিন্তু তারপরও আমরা ওই মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করি। কাজেই তাঁর মৃত্যুর পরপরই সেটা স্বাভাবিক কারণে নাকি নির্যাতনের কারণে ঘটেছে, সে জন্য তদন্ত চালানোসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছি।’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের গভীর উদ্বেগ সরকার অগ্রাহ্য করছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মন্তব্য এ ক্ষেত্রে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারের অসদাচরণের বিষয়ে প্রতিবেদন করার পর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে—এইচআরডব্লিউর বক্তব্যটি আইনমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সংঘটিত ঘটনার কারণে তাঁকে কারাগারে নেওয়া হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার কারণে তাঁকে আটক করা হয়। পরে তদন্ত পেন্ডিং থাকার সময় তাঁকে জামিনও দেওয়া হয়। কাজেই উদ্বেগকে আমরা অগ্রাহ্য করছি, এতে কি সেটা প্রমাণিত হয়?’ তাঁর মতে, প্রতিবেদনে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়েও যা বলা হয়েছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা।

প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শিবিরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার প্রসঙ্গ আছে। পাশাপাশি আশ্রয়শিবিরের একটি ইসলামিক শিক্ষালয়ে হামলায় সাতজন রোহিঙ্গা হত্যার প্রসঙ্গ টেনে সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড ও সাত রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ড সরকার অস্বীকার করছে না। তবে এসব অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

আনিসুল হক গত বছরের অক্টোবরের সহিংসতা প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনারাই বলেন, সংখ্যালঘুরা কি লক্ষ্যবস্তু ছিলেন? একটা ঘটনা ঘটেছিল। এর জের ধরে কিছু কিছু জায়গায় সহিংসতা হচ্ছিল। আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়ে তা প্রতিহত করেছি। এখন সবকিছু শান্তিপূর্ণ রয়েছে। ব্যাপক অর্থে কোথাও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েনি।’

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামিকে খালাস দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। এ প্রসঙ্গও আসে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘একজন বিচারক তাঁর এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে মন্তব্য করেছেন। আমরা কি সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিইনি? আমি বলব, তিনি যা বলেছেন, তা আইনসম্মত হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এটার কি কোনো প্রতিফলন আছে প্রতিবেদনে?’