এইচএসসি ’২০ ব্যাচ নিয়ে পাঠকেরা কে কী বলছেন

ফাইল ছবি

এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি ফলের গড় অনুযায়ী এইচএসসির ফলাফল নির্ধারিত হবে। সে ক্ষেত্রে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করছে এ বছর। প্রথম আলোর ফেসবুক পেজের পক্ষ থেকে সরকারের এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পাঠকদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ পাঠক সেখানে মন্তব্য করেছেন।

এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যেমন অনেকেই মতামত দিয়েছেন, তেমনি বিপক্ষেও বলেছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া পাঠকদের কাছ থেকে এসেছে কিছু গঠনমূলক পরামর্শ।
সানজিদা পারভিন রিয়া লিখেছেন, ‘যারা গতবার ফেল করেছিল, তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো? এবার শতভাগ পাশ করলেও ভর্তি পরীক্ষায় গিয়ে কিন্তু তাদের ৫ শতাংশও উত্তীর্ণ হতে পারবে না। ছেলেমেয়েরা এইচএসসি পাশ করলে মোটামুটি একটা জব পায়। এ অটোপাশের জন্য এইচএসসির সেই মানটা আর থাকবে না।’
এম আর নিলয় লিখেছেন, ‘সরকার চাইলে মার্কস কমিয়ে পরীক্ষা নিতে পারত। সব মিলিয়ে ঠিক আছে। তবে রেজাল্টটা অনেকের জন্য হতাশাজনক হবে। অনেকেই জেএসসি, এসএসসির তুলনায় অনেক ভালো করত। বিশেষ করে তাদের জন্য হতাশাজনক।’

রুমানা মুক্তা মনে করেন, ‘এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা আগে এ প্লাস পায়নি, কিন্তু তাদের আগের চেয়ে ভালো প্রস্তুতি থাকার জন্য এবার পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্ত পরীক্ষা না হওয়ায় তারা মূল্যায়িত হবে না।’

জার্মেন তরুণ গোমেজ এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করেন। তিনি লিখেছেন, ‘অস্বাভাবিক করোনা প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে সবকিছু বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানে ভালো না মন্দ হয়েছে, সেই মতামতের অবকাশ নেই।’

শিপন মোল্লা মনে করেন সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক নয়। তিনি লিখেছেন, ‘অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এর চেয়ে সাধারণ পাস ঘোষণা করলে ভালো হত। তা ছাড়া সবকিছু চলছে আর শুধু বিদ্যাপীঠ থেকে করোনা ছড়াবে, এটা কেমন ধারণা? শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে কি আক্রান্ত হতে পারে না?’

মাহমুদ কিছুটা ভিন্ন মত জানিয়ে লিখেছেন, ‘সম‌বেদনা এইচএসসি উত্তীর্ণ‌দের জন্য। ১৯৭২ সা‌লের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা সব ধর‌নের চাকরি‌তে অব‌হে‌লিত ছিল। ২০২০ সালের এইচএসসি অটোপ্রমোশনধারীরা ‌নিশ্চয়ই হালজমানার সোনার হ‌রিণখ্যাত “চাকরি” পাওয়ার ক্ষে‌ত্রেও অব‌হে‌লিত হতে পা‌রে। তাই অটোপ্রমোশনের বিষয়টি মেধাবী‌দের জন্য নিশ্চয়ই ক‌ষ্টের।’

কে এম নাঈম আহমেদ লিখেছেন, ‘এইচএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষার ব্যাপারে শতাব্দীর সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত। কেউ জেএসসি ও এসএসসিতে খারাপ করে এইচএসসিতে ভালো করে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। আবার কেউ জেএসসি, এসএসসিতে ভালো করে এইচএসসিতে ফেল করে। কেউ দুই বছর পরিশ্রম করেও যা পেল, কেউ বই না ছুঁয়েও সেই একই ফল পেল।’

মো. মেহেদি হাসান সরদার লিখেছেন, ‘বাজে সিদ্ধান্ত। এসএসসিতে যদি এক লক্ষ জিপিএ–৫ পায় এইচএসসিতে সেটা অর্ধেকে নেমে যায়। পাশাপাশি ফেল তো আছেই। আর সবচেয়ে বড় কথা এতে জেনুইন মেধাবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এইচএসসি রেজাল্ট মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় একটা বড় ফ্যাক্টর।’

শিহাব সাইফুল লিখেছেন, ‘অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত। জীবনের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। হয়তো কিছু শিক্ষার্থীর জন্য সমস্যা হয়েছে। কিন্তু একটা বড় সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা।’

শিপন দের পরামর্শ হলো, ‘আমি এ বিষয়কে সাধুবাদ জানাই। তবে ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি ফলাফলকে প্রাধান্য না দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি মেধার ভিত্তিতে করার দাবি জানাচ্ছি।’

তনাজ আখতার লিখেছেন, ‘সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে শুধু এইচএসসি কেন অর্নাস-মাস্টার্স সব পরীক্ষার্থীর অটোপাসের ব্যবস্থা করে দিন।’

সাইবা মাসনুন লিখেছেন, ‘নিরাপত্তার বিবেচনায় ঠিক আছে। কিন্তু এ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অ্যাডমিশন, চাকরি—সব জায়গায়ই ধাক্কা খাবে, কথাটা দুঃখজনক হলেও সত্যি।’
তন্ময় রাদ লিখেছেন, ‘পরীক্ষা দিতে এসে কোনো শিক্ষার্থী ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কিংবা মৃত্যুবরণ করলে, তার দায় শেষ পর্যন্ত সরকারের ঘাড়েই যেত। তাই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছোটখাটো কিছু সমস্যার সৃষ্টি হলেও করোনাকাল বিবেচনায় এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সরকারের এ সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ারই যোগ্য।’
আবু ইউসুফ ছুটন লিখেছেন, ‘যে ভালো স্টুডেন্ট, তার জন্য খারাপ হয়েছে। যে খারাপ স্টুডেন্ট, তার জন্য ভালো হয়েছে।’
আশরাফুল মাজ লিখেছেন, ‘বাজারে মানুষের জন্য হাঁটা যায় না।

বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড়। পোশাক কারখানায় লাখ লাখ শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করছে। গণপরিবহন আগের মতোই গাদাগাদি করে চলছে। ও লেভেল এবং এ লেভেলের পরীক্ষাও হচ্ছে। করোনা শুধু নির্দিষ্ট করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরই হবে? এ ব্যাচকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। সিলেবাস ও মার্কস কমিয়ে সীমিত আকারে হলেও পরীক্ষা নেওয়া হোক। শতভাগ পাশের পাবলিক পরীক্ষা পৃথিবীর কোথাও নেই। সার্টিফিকেট অবমূল্যায়নের রাস্তা খুলে গেল। সিদ্ধান্তটি আবার বিবেচনার অনুরোধ রইল।’