এক অর্থবছরে কর ৭০ গুণ বৃদ্ধি, আতঙ্কে বাসিন্দারা

রায়পুর পৌর এলাকার বাসিন্দা নজির আহমেদের দুটি দোকানের হোল্ডিং কর ছিল বছরে ১ হাজার ৩০০ টাকা। উপজেলা পরিষদ সড়কে অবস্থিত ওই দোকানগুলোর কর ছয়-সাত বছর ধরে নিয়মিতই পরিশোধ করতেন তিনি। গত অক্টোবর মাসে তাঁকে পৌর কার্যালয় থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ওই সব দোকানের ৬৫ হাজার টাকা কর পরিশোধ করার জন্য।

তাঁর মতো পৌরসভার ১২ হাজার করদাতা করের নতুন নোটিশ পেয়ে প্রায় চার মাস ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। কারণ কর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫০ থেকে ৭০ গুণ বাড়ানো হয়েছে। করের আতঙ্কে কয়েকজন বাসিন্দা বাড়ি ও দোকান বিক্রি করে দেওয়ার কথাও ভাবছেন।

পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার হোল্ডিং রয়েছে। বাসিন্দা আছেন ২৬ হাজার। গত মে ও জুন মাসে পৌরসভার কর্মচারীরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে নতুন কর নির্ধারণ করেন। এতে আগের চেয়ে অনেক গুণ কর বেড়ে গেছে। পরে হোল্ডিং মালিককে কর পরিশোধ করতে নোটিশ দেওয়া হয়।

কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, এবার পৌর কর্তৃপক্ষ যে বাড়িতে মালিক বাস করবেন, সেই বাড়ির প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় দেড় হাজার টাকা ধরে কর নির্ধারণ করেছে। অথচ ২০১১-১২ অর্থবছরে এই নির্মাণ ব্যয় ৩০০ টাকা হিসাব করে কর নির্ধারণ করা হয়েছিল।

পৌরসভার সর্বশেষ ম্যানুয়ালের তৃতীয় অধ্যায়ের ২৩ অনুচ্ছেদে কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে হোল্ডিংকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে—সম্পূর্ণ ভাড়া দেওয়া গৃহ, মালিক নিজে বসবাসের গৃহ এবং আংশিক ভাড়া দেওয়া গৃহ।

সম্পূর্ণ ভাড়া দেওয়া গৃহের ক্ষেত্রে ১২ মাসের মধ্যে দুই মাসের ভাড়ার টাকা গৃহের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য করের আওতামুক্ত থাকবে। বাকি ১০ মাসের ভাড়ার টাকার ২৭ শতাংশ কর দিতে হবে। আর মালিক নিজে থাকলে একই পরিমাণ জায়গার ওপর করা গৃহের যে পরিমাণ ভাড়া হতে পারে, তাঁর ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করা হবে। এ ক্ষেত্রেও ১২ মাসের মধ্যে দুই মাসের ভাড়ার পরিমাণ টাকা গৃহের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য করের আওতামুক্ত থাকবে। বাকি ১০ মাসের ভাড়ার এক-চতুর্থাংশও করের আওতামুক্ত হবে। এরপর যে পরিমাণ টাকা থাকার কথা, সেটির ৭ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

আর আংশিক ভাড়া দেওয়া গৃহের ক্ষেত্রে ১ নম্বর (ভাড়া দেওয়া গৃহ) ও ২ নম্বর (মালিক নিজে থাকেন এমন গৃহ) বিধান অনুযায়ী নির্ধারণ করা কর যোগ করে কর নির্ধারণ করতে হবে।

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সোহেল পাঠান বলেন, তাঁর জরাজীর্ণ টিনের ছোট একটি ঘরের আগে পৌর কর ছিল ৬৩ টাকা। সেই কর এখন বাড়িয়ে করা হয়েছে সাড়ে চার হাজার টাকা। ঘরটিতে তাঁরা বাস করেন। ভাড়াও দেন না। অতিরিক্ত কর নির্ধারণ করায় তিনি বিস্মিত। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, ‘আগে আমার দোতলা বাড়ির পৌর কর ছিল ২ হাজার টাকা। আর এখন ৪৩ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মোহন ভূঁইয়া বলেন, তাঁদের তিনতলা আবাসিক হোটেলের আগে পৌর কর ছিল ৩ হাজার টাকা। এবার সেটি ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পরে আপত্তি দিলে ৬০ হাজার টাকা চূড়ান্ত করা হয়।

নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলর বলেন, পৌরসভা হলো একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সেই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর নিয়ে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। পৌর এলাকার বাসিন্দারা প্রতিদিন বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ঘর বা দোকান বিক্রি করে দেওয়ার কথাও বলছেন।

পৌরসভার সচিব আবদুল কাদের বলেন, সর্বশেষ ২০১১-২০১২ সালে কর নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই সময় দেড় কোটি টাকা কর আদায় হতো। এবার সব হোল্ডিং মালিকের কর বেড়েছে। তা ছাড়া পৌরসভার ৯১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে কর বাড়ানো হয়েছে।

রায়পুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কর নির্ধারণ করা হয়েছে। হোল্ডিং মালিকের অভিযোগ থাকলে তাঁরা আপত্তি দিতে পারবেন। ইতিমধ্যে আপত্তি করায় অনেকের কর কমানো হয়েছে।