এক আইনজীবীর ‘১২ কোটি টাকা ফি’ নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধানে রিট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

এক আইনজীবীর আইনি ফি হিসেবে বিপুল টাকা নেওয়া সম্পর্কিত বিতর্কসহ অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে। আইনজীবী এম আশরাফুল ইসলাম আজ বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন। আর যে আইনজীবীকে নিয়ে অভিযোগ, তাঁর নাম মো. ইউসুফ আলী।

গ্রামীণ টেলিকম ও এর প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে লভ্যাংশের বকেয়া পাওনার দাবিকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়ন ও চাকুরিচ্যুত শ্রমিক–কর্মচারীরা মামলা করেন। শ্রমিক–কর্মচারীদের আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী। লভ্যাংশের বকেয়া পাওনার দাবি ও পরিশোধ নিয়ে পরে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। এ নিয়ে আইনজীবী ইউসুফ আলী শ্রমিক–কর্মচারীদের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা ফি নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

৩ জুলাই এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ১২ কোটি টাকার কথা যে বলা হচ্ছে, তা টোটালি একটি ইমাজিনারি ফিগার। তবে আমি বড় অঙ্কের ফি পেয়েছি।’ তাঁর চেম্বার ও নিজের কয়েকটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে সেদিন জানান তিনি।

এ অবস্থায় মো. ইউসুফ আলীর বিপুল টাকা ফি নেওয়া সম্পর্কিত বিতর্কসহ অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে আজ রিট করলেন সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী এম আশরাফুল ইসলাম।

আইনজীবী এম আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার রিটের ওপর শুনানি হতে পারে। ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়া ও ইউসুফ আলীর প্রেস বিফিং থেকে সাধারণ মানুষ ও নবীন আইনজীবীদের মধ্যে নানা রকম ধারণা হতে পারে। ভুক্তভোগী বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে তাঁদের সম্পত্তি বা মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো সুবিধা, এমনকি যেকোনো পরিমাণ ফি আইনজীবীরা নিতে পারেন, এমন ধারণাও হতে পারে। যে কারণে ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়ার বিকর্তসহ অন্যান্য বিষয়ে বার কাউন্সিলের বিধান অনুসারে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।

এর আগে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চ গত ৩০ জুন শ্রমিকদের পাওনার দাবি নিয়ে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি এবং পাওনা পরিশোধের বিবরণী দাখিল করতে বলেন। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক কোম্পানি বেঞ্চ সেদিন দুই পক্ষের আইনজীবীকে যৌথভাবে হলফনামা আকারে এসব তথ্য আগামী ২ আগস্টের মধ্যে দাখিল করতে বলেন।

সেদিন আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান এবং শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী শুনানিতে ছিলেন।

শুনানিকালে আদালত বলেন, একটি পোর্টালে এসেছে, আইনজীবীর (শ্রমিক–কর্মচারীদের) ফান্ডে ১২ কোটি টাকা গেছে। সেটি হলে ভুল বার্তা যাবে। উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী হননি, যাঁর ফি ১২ কোটি টাকা হবে। স্বচ্ছতার খাতিরে আদালত ও আইনজীবীর শুদ্ধতা নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য সমঝোতা চুক্তি ও পাওনা পরিশোধের বিবরণী হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলা হলো।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, লভ্যাংশের বকেয়া পাওনাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে গত বছর হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এর শুনানি নিয়ে আদালত কারণ দর্শাতে নোটিশ দেন। গত ৪ এপ্রিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। পরে মামলা প্রত্যাহারের শর্তে পাওনা পরিশোধ নিয়ে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে জানিয়ে আদালতে মামলা না চালানোর কথা বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ মে না চালানোর দিক বিবেচনায় মামলা (অবসায়ন আবেদন) খারিজ হয়। এরপর গত ৩০ জুন ‘গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক–কর্মচারী ইউনিয়ন বনাম গ্রামীণ টেলিকম এবং অন্যান্য’ শিরোনামে মামলাটি কার্যতালিকায় ওঠে।

৩০ জুন আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেছিলেন, ১৭৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সর্বমোট পাওনা টাকার পরিমাণ আনুমানিক ৪৩৭ কোটি। এর মধ্যে ১৬৮ জনের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। চারজন মারা গেছেন ও চারজন বিদেশে থাকার কারণে তাঁদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে।