এক ওসি ও গুলিবিদ্ধ ৬ জন ঢাকা মেডিকেলে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ
ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ আর হরতালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয়জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া হরতালকারীদের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন দুই কিশোরসহ ছয়জনের কেউই মাদ্রাসাছাত্র নন। তাদের চারজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার, একজন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ও একজন নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়ের।

আহত পুলিশ কর্মকর্তা এস এম জালালউদ্দিন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

তাঁকে উদ্ধৃত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, এস এম জালালউদ্দিনকে শুলপুর এলাকায় আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে হরতাল সমর্থনকারীরা হকিস্টিক দিয়ে পেটান। এতে তিনি মাথায় আঘাত পান। দুপুরের দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গতকাল দিবাগত রাতে যে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়, তাঁরা হলেন শুকুর আলী (১২), রমজান মিয়া (১৪), সিফাত (২৫) ও আবদুল বাসেত মিয়া (২৬)।

শুকুর আলীর পাঁজরের নিচে বুলেট লাগে। তার বাবা সিএনজিচালক দারু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালায়। গতকাল শনিবারও অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছিল। এ সময় মাদ্রাসার ছাত্র–শিক্ষকের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুড়লে তাঁর ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। ছেলেকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বজনেরা। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। রাত তিনটায় তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছান।

কিশোর রমজানের পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে কাঁধের নিচ দিয়ে বেরিয়ে যায়। রোববার দুপুরে এই কিশোরের সঙ্গে যখন দেখা হয়, তখন হাসপাতালের বিছানায় বসেছিলেন তাঁর মামি শরিফুন্নেসা হ্যাপি। শরিফুন্নেসা প্রথম আলোকে বলেন, খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান রমজান। কসবার এক গ্রামে তার মা–বাবা থাকেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর আর পড়ালেখা করতে পারেনি। পরে মামা–মামির কাছে এসে উঠেছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে নিজের ও পরিবারের খরচ চালায়। গতকাল রমজানও ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বেরিয়েছিল, আচমকা গুলি লাগে পিঠে।

গুলিবিদ্ধ বাসেত অটোরিকশাচালক। হাসপাতালে তাঁর পাশের বিছানায় প্রায় অচেতন অবস্থায় ছিলেন মো. সিফাত। সিফাতের বড় ভাই মো. সালমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার কাছে শিমরাইলকান্দিতে তাঁদের বাসা। গন্ডগোল হচ্ছে দেখে বাসেত, প্রতিবেশী এক ছেলেসহ রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। দুজনই গুলিবিদ্ধ হন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আসেন। মো. সালমান বলেন, গুলিবিদ্ধ প্রতিবেশী ছেলেটির নাম মোরশেদ।

রোববার দুপুরের দিকে নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় থেকে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন শাকিল। তাঁর খালাতো ভাই সবুজ প্রথম আলোকে বলেন, সকালে দোকান খুলতে গিয়েছিলেন শাকিল। দোকানের শাটার খুলতে না খুলতেই পায়ে গুলি এসে লাগে। যাত্রাবাড়ি থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মানিক নামের একজনের আসার কথা জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত নার্স পারভেজ কবির। তবে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।