এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকবে ৮ দিন

কক্সবাজার উপকূলে কালবৈশাখীর এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড লবণ মাঠ। উৎপাদন বন্ধ থাকবে আট দিন। বুধবার দুপুরে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়েনের কাজীবাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রচণ্ড দাবদাহে কক্সবাজার উপকূলে এত দিন লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছিল। পয়লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে কালবৈশাখী আতঙ্কে ভুগছিলেন চাষিরা। কারণ, বৃষ্টি হলেই লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে ৭ থেকে ১০ দিন। বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয় উৎপাদিত লবণ।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ উপকূলজুড়ে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি নামে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে কালবৈশাখীর তাণ্ডব। তাতে উখিয়া, কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া উপজেলায় প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়ে। উপড়ে পড়ে কয়েক শ ঘরবাড়ি ও পানের বরজ। মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৫০ হাজার একর জমির লবণ উৎপাদন। এসব জমিতে প্রতিদিন লবণ উৎপাদিত হয় গড়ে ২৫ হাজার মেট্রিক টন।

বিসিকের দেওয়া তথ্যমতে, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন চলছে।

বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, এমনিতে একবার বৃষ্টি হলে ৭-৯ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আজকের এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেও ৫০ হাজার একরের মতো জমিতে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে, উৎপাদন বন্ধ থাকবে টানা সাত-আট দিন। এর মধ্যে আবার বৃষ্টি হলেও বন্ধের সময়সীমা আরও বাড়তে থাকবে। তবে আজকের বৃষ্টিতে লবণের তেমন ক্ষতি (নষ্ট) হয়নি। কারণ, চাষিরা জানতেন, কালবৈশাখী শুরু হবে। তাঁরা আগেভাগে মাঠে উৎপাদিত লবণ মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিলেন। কেউ কেউ লবণের ওপর পলিথিন চাপা দিয়ে কিংবা গুদামে সংরক্ষণ করেছেন।

বিসিক লবণ প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, পেকুয়ার মগনামা, রাজাখালী, উজানটিয়া, কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল, লেমশীখালী, ধুরুং, মহেশখালীর মাতারবাড়ী, হোয়ানক, কুতুবজোম ইউনিয়নে অন্তত ৫০ হাজার একর জমিতে বৃষ্টির পানি জমে লবণ উৎপাদন ব্যাহত করেছে। বৃষ্টির পানি সরিয়ে সেখানে (মাঠে) সমুদ্রের লোনা পানি ঢুকিয়ে মাঠ লবণ উৎপাদনের উপযোগী করতে সময় লাগবে ৭-৯ দিন। এই সময় পর্যন্ত লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন
কক্সবাজার উপকূলে সূর্যের তাপে মাঠে জমানো লোনা পানি শুকিয়ে উৎপাদিত হয় লবণ। গত সোমবার দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে
ফাইল ছবি

পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের কাজী বাজার এলাকার লবণচাষি আমজাদ হোসেন (৪৫) বলেন, সকাল থেকে প্রচণ্ড গরম পড়ছিল। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়। এরপর নেমে আসে বৃষ্টি। তখন চাষিরা উৎপাদিত লবণ রক্ষায় ছোটাছুটি করতে থাকেন। তবে সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম শহরে বৃষ্টিপাত হওয়ার খবরে চাষিরা আগাম জেনে গেছেন। এ কারণে উৎপাদিত লবণের তেমন ক্ষতি হয়নি।
বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে দৈনিক গড়ে লবণ উৎপাদন হচ্ছিল ২৫ হাজার মেট্রিক টন। বৃষ্টির কারণে ৮ দিন বন্ধ থাকলে লবণ উৎপাদন প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন কমে যাবে।

বিসিকের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে এসব জমির বিপরীতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। দেশে লবণের চাহিদাও ২৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত মৌসুমের ৪ মাসে উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৭৮০ মেট্রিক টন লবণ।

বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল বলেন, মৌসুমজুড়ে দাবদাহ পরিস্থিতি থাকায় এবার লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছিল। তা ছাড়া ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমির শতভাগে পলিথিন প্রযুক্তিতে লবণ চাষ হচ্ছে। এ কারণে উৎপাদনও বেড়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন চলবে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত বছরের পাঁচ মাসকে লবণ উৎপাদনের মৌসুম ধরা হয়।