একই গাছে গুটি, পাকা আম

আমগাছটির উচ্চতা ছয় থেকে সাত ফুট। গাছটির কোনো অংশে মুকুল, আবার কোনো অংশে আমের গুটি। কোনো অংশে কাঁচা আম, আবার কোথাও পাকা। একটি গাছে যেন ফুটে উঠেছে আমের ‘জীবনচক্র’।
বৈচিত্র্যময় এই জাতের আমগাছ দেখা যাবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রে। পাহাড়তলীতে অবস্থিত বারির চট্টগ্রামের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা এই আমের জাতের উদ্ভাবন করেছেন। আমটির নাম দেওয়া হয়েছে বারি আম-১১ (বারোমাসি)। ২০১৪ সালের জুনে জাতীয় বীজ বোর্ড এই জাতের আমের নিবন্ধন দেয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারি খামার ও বাগানিদের কাছে আস্তে আস্তে বারি আম-১১-এর কলমযুক্ত চারা বিতরণ শুরু হয়েছে।
এই জাতের গাছের পাকা আম খেতে না-খেতে কাঁচা আমের পাকার সময় হয়ে যায়। অন্যদিকে মুকুলগুলো পরিণত হয় গুটিতে, আর আমের গুটি হয়ে যায় পরিপূর্ণ। ফলে সারা বছর ধরে একই গাছ থেকে পাওয়া যায় সুস্বাদু আম।
বারির চট্টগ্রাম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম হারুনর রশীদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রে দীর্ঘ গবেষণার পর এই আমের জাতের উদ্ভাবন করা হয়। এখন আমরা বিভিন্ন খামারির কাছে এর কলমযুক্ত চারা বিতরণ করছি। কলমের মাধ্যমে এর বিস্তার করা হচ্ছে। বীজ থেকে করলে মাতৃগাছের মতো ফল পাওয়া যায় না।’ তিনি বলেন, এক গাছে একই সঙ্গে মুকুল, আমের গুটি ও পরিপূর্ণ ফল পাওয়া যায়। তাই একে বারোমাসি আম বলা হয়।
২০১৪ সালের ১৪ জুন ছয়টি অন্য জাতের চারা আমগাছে বারি আম-১১-এর কলম দেওয়া হয়। ওই গাছগুলো এখন ছয়-সাত ফুট উচ্চতার হয়েছে। ফল ধরছে এক বছর পর থেকেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, পোকামাকড়ের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কোনো কোনো আম কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক সহকারী শহিদুল আলমকে গাছের পরিচর্যা করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এই গাছগুলো লাগানোর এক বছরের মধ্যেই ফল ধরে। যত দিন বাঁচবে, তত দিন এসব গাছে সারা বছর আম ধরবে।

একই গাছে আমের গুটি ও পরিপক্ব আম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) চট্টগ্রামের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে গতকাল ছবিটি তুলেছেন সৌরভ দাশ
একই গাছে আমের গুটি ও পরিপক্ব আম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) চট্টগ্রামের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে গতকাল ছবিটি তুলেছেন সৌরভ দাশ

২০১৫ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এলাকায় আরও ২০টি বারি আম-১১-এর কলমযুক্ত চারা লাগানো হয়। ওই সব গাছেও এখন আম ধরছে। গত সপ্তাহে আরও প্রায় ১০০টি বারি-১১-এর কলমযুক্ত চারা রোপণ করা হয়েছে।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানায়, বারি-১১ জাতের আমের মিষ্টতা অর্থাৎ টোটাল সলিউবল সুগার (টিএসএস) ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বারি আম-১১ সারা বছর ফুল ও ফল দেয়। তবে বছরের ৩টি সময়ে ফুল ও ফল তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ, মে-জুন ও আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি ফল আহরণ করা যায়। একটি থোকার মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি আম থাকে। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম।
চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের অপর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এক বছর বয়সী গাছে আমের মুকুল আসে। তবে চার থেকে পাঁচ বছর বয়সী গাছ থেকে প্রতিবার ৬০ থেকে ৭০টি আম আহরণ করা যায়। তিনি জানান, এই জাতের একটি গাছে বছরে ৫০ কেজি পর্যন্ত আম হয়। আমটি খেতে সুমিষ্ট।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম হারুনর রশীদ বলেন, আস্তে আস্তে এই জাতের আমের চাষ বাড়বে। বাড়ির ছাদেও এই আমের চাষ সম্ভব।
সাজেদা হক নামের এক নারী বলেন, তিনি তাঁর বাড়ির ছাদের বাগানে এই জাতের আমগাছ লাগিয়েছেন। এখন ওই গাছে মুকুল আসছে।