‘একজন লেখকের জন্য পাঠকের ভালোবাসাই আসল পুরস্কার’

সাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘মা’ উপন্যাসের ১০০তম মুদ্রণ উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রামেন্দু মজুমদার। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে
ছবি: হাসান রাজা

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেছেন, একজন লেখকের জন্য আসল পুরস্কার হচ্ছে পাঠকের ভালোবাসা। আনিসুল হক সেই ভালোবাসা পেয়েছেন। তাঁর মা উপন্যাস যে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে, এর চেয়ে বড় পুরস্কার একজন লেখকের জন্য আর কিছু হতে পারে না।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সাহিত্যিক আনিসুল হকের মা উপন্যাসের শততম মুদ্রণ উপলক্ষে ‘আলাপে বিস্তারে’ নামে এক অনুষ্ঠানে রামেন্দু মজুমদার এসব কথা বলেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেঙ্গল শিল্পালয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রকাশনা ও গ্রন্থ বিপণন সংস্থা ‘বেঙ্গল বই’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছে। কেবল সাহিত্য নয়, গান-চিত্রকলা ইত্যাদিও হয়েছে। কিন্তু দুটো বই একেবারে চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে। এর একটি হচ্ছে জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি, আরেকটি আনিসুল হকের মা। যত দিন এই বই দুটি পঠিত হবে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা ও মানুষের আত্মত্যাগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হবে। যেভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষ মা উপন্যাসটি অনুবাদ করেছেন, সেটা লেখকের বড় পাওয়া।’

অনুষ্ঠানে মা উপন্যাসের কিছু অংশ পড়ে শোনান অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার। এতে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর।

সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘মা শুধু উপন্যাস বা গ্রন্থ নয়, এটি একাধারে কথাশিল্প, ইতিহাস ও আমাদের হৃদয়ের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম তন্ত্রীর সঙ্গে সংবেদনশীলতার সমন্বয়। সরকারকে বলব, একাত্তরের দিনগুলিমা পাঠ্যপুস্তকে কিংবা দ্রুত পঠনে অন্তর্ভুক্ত করুন। এই দুটো গ্রন্থ পাঠ করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিস্তারের বক্তৃতা এত দিতে হবে না।’

মা উপন্যাসের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এতে আলোচনায় অংশ নেন মা উপন্যাসের লেখক আনিসুল হকও।

আনিসুল হক বলেন, ‘আমি বারবার বলি, মা উপন্যাসটি আমার মাধ্যমে লিখিত হয়েছে বটে, কিন্তু এটি আসলে শহীদ আজাদ তাঁর বুকের রক্ত এবং তাঁর মা অশ্রু দিয়ে লিখেছেন। মাকে আমরা সবাই ভালোবাসি, দেশকেও ভালোবাসি। কাজেই মা যে বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় হয়ে উঠবে, এতে আমার খুব কৃতিত্ব নেই। আমি অনুরোধ করে কাউকে মা উপন্যাস অনুবাদ করতে বলেছি, তা নয়। একেকজন পড়েছেন ও মনে করেছেন, বইটি অনূদিত হওয়া উচিত, মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানো উচিত। তাঁরা তা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষের ভালোবাসা আমি পেয়েছি। আমি বাংলাদেশের পাঠকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।