একবিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের সুপারিশ লজ্জাজনক: সুলতানা কামাল

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওর বিকল্প চেয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি যে সুপারিশ করেছে, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা সুলতানা কামাল। তিনি এ বিষয়ে আজ রোববার সন্ধ্যায় তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রথম আলোর কাছে।

সুলতানা কামাল
ফাইল ছবি

আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি। এ কি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্যের কাজ—বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এই সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী। সংবিধানের ২৮–এর (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী–পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।’ আর ২৮–এর (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী–পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন।’
একজন সংসদ সদস্য সংবিধান রক্ষা করার জন্য শপথ নেন।

আজ যে সুপারিশের কথা শুনলাম, তাতে এটি স্পষ্ট যে এই সুপারিশ যে বা যাঁরাই করে থাকুন, তাঁরা এর মাধ্যমে সংবিধানের বিরোধিতা করেছেন। রাষ্ট্র নারী–পুরুষ কারও প্রতি বৈষম্য করবেন না বলা আছে, তাই এর মাধ্যমে তিনিও এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ছিল ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে দেশ গড়া। এই সুপারিশ বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে গর্বের ঘটনা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অসম্মান দেখাল।

সংসদ সদস্য এটা করে অসততারও পরিচয় দিয়েছেন। এখানে এটিই প্রমাণিত হয় যে তিনি শপথ নেওয়ার সময় সৎভাবে নেননি।

কে বা কারা এই সুপারিশ করলেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হোক। যিনিই করে থাকুন, তিনি অসংস্কৃতিমান। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ সুপারিশ চরম বৈষম্যমূলক, ন্যায়চেতনার বিরোধী। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এ ধরনের কাজ লজ্জাজনক।