এখনো কোনো সাংসদের চরণ পড়েনি যেখানে
শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা পাওয়ার তেমন কোনো সুযোগ নেই। যোগাযোগব্যবস্থা নাজুক। বিদ্যুৎ নেই। নদীভাঙন ও বন্যায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়া দুষ্কর। এ অবস্থা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বুলাকিপুর ইউনিয়নের করতোয়া নদীপারের কৃষ্ণরামপুর চরপাড়া গ্রামের।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণরামপুর চরপাড়া গ্রাম। এর পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক ঘিরে রয়েছে করতোয়া নদী। আর উত্তরে রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়ন। গ্রামটিতে ছয় শতাধিক লোকের বাস।
সরেজমিন গত শুক্রবার দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে রানীগঞ্জ হয়ে গ্রামটিতে যাওয়ার রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশ কাঁচা। পাকা যেটুকু আছে, তাও আবার খানাখন্দে ভরা। গ্রামে ঢুকতেই দেখা মিলল সরোয়ার হোসেন (৫৪) নামের এক ব্যক্তির। পালংশাকের জমিতে নিড়ানি দিতে দিতে তিনি বলেন, পীরগঞ্জের কুমারপুরে তাঁর জন্ম। ’৯৫ সালে নদীভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে তিনি কৃষ্ণরামপুর চরে বসত গড়েন। এখানে যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, স্কুল ও কোনো স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় ভীষণ ভোগান্তিতে থাকতে হয় তাঁদের। বন্যায় জমি ডুবে থাকায় ইরি ও কিছু রবিশস্য ছাড়া কিছু হয় না। গ্রাম ঘুরে দেখা গেল, সাত-আটটি বাদে খড়, শণ আর পাটকাঠি দিয়ে তৈরি সব বসতবাড়ি। স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারেরও খুব অভাব।
গ্রামের বাসিন্দা কিনা মাহমুদসহ (৭২) অনেকে বলেন, ১৯৬০ সালের দিকে এ চরে মানুষের বসবাস শুরু হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এখানে কোনো সাংসদের চরণ পড়েনি। অবশ্য ভোটের আগে অন্য জনপ্রতিনিধিরা আসেন। তখন রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা। কিন্তু ভোটের পরে আর তাঁদের দেখা মেলে না। দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক বলেন, তিনি শিগগিরই ওই গ্রামে যাবেন। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের আলো জ্বালাবেন। অন্যান্য সমস্যারও দ্রুত সমাধান করবেন।
গ্রাম ঘুরে দেখা মিলল টিনের তৈরি একটি ছোট্ট ঘরের। সেটির ওপর ‘কৃষ্ণরামপুর আমজাদের বাড়ি চরপাড়া আনন্দ স্কুল’ লেখা একটি সাইনবোর্ড। এ বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক শ্যামলী আক্তার বলেন, ২০১৪ সালে এটি চালু হয়। মোট শিক্ষার্থী ৩৫ জন। অথচ গ্রামে ৫০ থেকে ৬০ জন শিশু আছে। আর কাছাকাছি কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় মেয়েদের বাল্যবিবাহই নিয়তি।
গ্রামের রুপালি খাতুন বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় নারীদের। গ্রামে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র এমনকি একটি ওষুধের দোকানও নেই। বেশির ভাগ রোগীকে চিকিৎসার জন্য পীরগঞ্জ হয়ে রংপুর যেতে হয়।
গ্রামবাসী বলেন, পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের সঙ্গেই যোগাযোগ করাটা তাঁদের জন্য তুলনামূলক সহজ। গ্রামটি থেকে চতরা চার কিলোমিটার দূর। একটি খাল পার হয়ে সেখানে যেতে হয়। গত বছর অবশ্য সেই খালে একটি কালভার্ট করা হয়। কিন্তু সংযোগসড়ক না করায় সেটি এখনো চালু হয়নি। আর নিম্নমানের কাজ করায় কালভার্টেও ফাটল ধরেছে।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন প্রধান বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ওই চরবাসীর জন্য কী করা যায়, তা ভেবে দেখবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোখছানা বেগম বলেন, চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।