এখনো গুম হয়ে আছেন ৮৬ বাংলাদেশি

জুলাই ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত ১১৫ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের গুম নিয়ে প্রতিবেদনটি গতকাল প্রকাশিত হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
ছবি: টুইটার

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশে এখনো ৮৬ জন গুম হয়ে আছেন। সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ বলেছে, তারা মনে করে, জাতিসংঘের উচিত গুম নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া। প্রতিবেদনে গুমের জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে দায়ী করা হয়েছে।

জুলাই ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত মোট ১১৫টি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এইচআরডব্লিউ ‘নো সান ক্যান এন্টার: আ ডিকেড অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এটি প্রকাশিত হয় ১৬ আগস্ট। নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা, গুম বন্ধ করা ও ভবিষ্যতে নির্যাতন প্রতিরোধের নিশ্চয়তা আদায়ে জাতিসংঘ, দাতাগোষ্ঠী ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে মানবাধিকার সংগঠনটি।

এইচআরডব্লিউর ৫৭ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ধারাবাহিকভাবে গুম করে আসছে এবং এর বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য–প্রমাণ আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উন্নয়ন সহযোগিতা দিয়ে থাকে এমন দেশের সরকার, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজ বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধে আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার কখনোই এ আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া মহাদেশের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীদের উপহাস করেন এবং নিয়মিত তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে থাকেন। এর অর্থ নিরাপত্তা বাহিনী যে গুমের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে, সেটিকে বন্ধ করতে অর্থপূর্ণ কোনো কাজ করার ইচ্ছা নেই সরকারের।’

তিনি আরও বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই গুমের শিকার হতে হবে, এ ভয় নিয়ে বাঁচতে হয় সমালোচকদের। যাঁরা গুম হয়েছেন, তাঁদের ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা ক্ষীণ। সে কারণে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের উচিত বাংলাদেশে গুম নিয়ে তদন্ত শুরু করা।

ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অর্থপূর্ণ কিছু করছে না সরকার
জাতিসংঘের নেতৃত্বে গুম নিয়ে তদন্তের প্রস্তাব
গুমের জন্য দায়ী করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো বহু বছর ধরেই নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। বিগত সরকারের আমলেও এমনটি ঘটেছে। কিন্তু গত এক দশকে ‘গুম’ এই সরকারের ‘হলমার্ক’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ গুম বা গুমের ভয় দেখানোর কাজটি করছে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে এবং বাক্‌স্বাধীনতা হরণ করতে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ পরে ফিরে এসেছেন। আবার কাউকে কাউকে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। কেউ কেউ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

বাংলাদেশ সরকার ধারাবাহিকভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, তারা মামলা করতে গেলে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী ফিরিয়ে দিচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো গুমের বেশির ভাগ ঘটনায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) দায়ী করেছে। র‌্যাবকে ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং বিভিন্ন সময় একে ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সংগঠনটি আরও বলেছে, র‌্যাবকে শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী এমন অধিনায়কদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের অক্টোবরে ১০ জন মার্কিন সিনেটর র‌্যাবের শীর্ষ ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য চিঠি দেন। এইচআরডব্লিউ বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্য সরকারগুলোরও উচিত হবে গুম ও মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া।