এপ্রিলে বৃষ্টি এত কম

ফাইল ছবি

রাজধানীতে কয়েক দিনের তীব্র তাপ প্রবাহের পর থেকে স্বস্তির বৃষ্টির জন্য ঢাকাবাসীর অপেক্ষার মধ্যে গতকাল রোববার রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে।
চলতি মৌসুমে ঢাকার আশপাশে কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টি হলেও ঢাকায় একরকম যেন খরাই চলছিল। অবস্থা এমন যে হঠাৎ দুফোঁটা বৃষ্টি পড়তে না পড়তেই যাঁরা সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস লিখতে শুরু করেছিলেন, তাঁরাও শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়েছেন!

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকায় এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত প্রায় তিন গুণ কম হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকায় গত বছর এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়েছিল ১২৮ মিলিমিটার, সেখানে এ বছর এপ্রিল মাসে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৩৯ মিলিমিটার। গত বছর এপ্রিলে সারা দেশে বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল ৬৫৫৭ মিলিমিটার, সেখানে এ বছর সারা দেশে রেকর্ড হয়েছে ১১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি।

আবহাওয়া অফিস বলছে, যেখানে এই মৌসুমে সকাল-বিকেল কালবৈশাখী ঝড় দেখা যায়, সেখানে গত মাসে (এপ্রিল মাসে) উল্লেখ করার মতো কালবৈশাখী ঝড় হয়েছিল মার্চ মাসে গুনে গুনে পাঁচ দিন (৪, ৮, ১৬, ২১ ও ৩০ এপ্রিল)। তবে কোনো কোনো দিন ঢাকায় সামান্য বৃষ্টিপাত বা ঝোড়ো হাওয়া অনুভূত হলেও বেশির ভাগই ছিল ঢাকা বিভাগের বাইরে।

ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু দেশে এ বছর ব্যাপকভাবে কালবৈশাখী ঝড় হয়নি, তাই ঢাকাতেও সে অর্থে বৃষ্টিপাত দেখা যায়নি।

আবহাওয়াবিদ ড. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বা এর আশপাশে আমরা বৃষ্টি পাচ্ছি না। কিন্তু সিলেট, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা অঞ্চলে কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে। অন্যান্য বছর সকালে-বিকেলে কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কালবৈশাখী ঝড়ের প্রধান নিয়ামক হচ্ছে জলীয় বাষ্প। সেটা এবার কম থাকায় সেভাবে ঘন-কালো মেঘ জমে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে না। অতীতে এই মৌসুমে এমনটা আর দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শনিবারও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, কিছু কিছু স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে (নিকলী পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুসারে) ৫২ মিলিমিটার, সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে (১৬ মিলিমিটার), রংপুর বিভাগের ডিমলাতে (৬৫ মিমি) ও তেঁতুলিয়াতে (১৮ মিমি) চট্টগ্রামে (১ মিলিমিটার) ও বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে সামান্য বৃষ্টি হয়। গতকাল একবারেই বৃষ্টি হয়নি রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে।

এবার কালবৈশাখী কম কেন?
প্রাক মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত উষ্ণ জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস আর উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে আসা শুষ্ক ও ঠান্ডা বাতাস—এই দুটোর সংমিশ্রণে যে মেঘ তৈরি হয়, তার মাধ্যমেই অল্প সময়ে প্রচুর বৃষ্টপাত হয়। যাকে বলা হয় কালবৈশাখী। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে অল্প সময়ের জন্য বৃষ্টিপাত হচ্ছে ঠিকই তবে বৃষ্টির পরিমাণও খুব সামান্য।

আবহাওয়া বিশ্লেষকেরা বলছেন, পশ্চিমা লঘুচাপের উপস্থিতির কারণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে এই বায়ুপ্রবাহ। মৌসুমি জলবায়ুর কারণে যে জলীয় বাষ্প থাকার কথা সেটি নেই। যতটুকু আর্দ্রতা থাকলে মেঘ তৈরি হয়, সেটা হচ্ছে না। এ সময় ঘন মেঘ তৈরি হওয়ার কথা, যা এ বছর হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টিও হচ্ছে না।

আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, সাগরে উচ্চ চাপ বিরাজ করছে। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলীয় বাষ্পের জোগান দিচ্ছে না। সে কারণে ঘন ঘন কালবৈশাখীও হচ্ছে না, অপর দিকে তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছিল। অতীতে এমন ঘটনা কম ছিল। পাঁচ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে আবহাওয়াগত পরিবর্তন বেশি হচ্ছে। এর পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিবছরই। এ বছরও এর আগের সব সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১ সালে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় গত মার্চ মাসে যশোরে ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় তাপমাত্রাও কমছে না।

শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি হবে কি?
আজ রোববার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে।

তবে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে বলা হলেও সব জায়গায় একই রকম বৃষ্টিপাত হবে ভাবার কারণ নেই। পূর্বাভাসে যখন বলা হয়, ‘কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টি হবে’ তখন সেসব এলাকার ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ এলাকার কথা বোঝানো হয়। ‘দু–এক জায়গায়’ বলা হলে ১-২৫ শতাংশ এলাকায় বৃষ্টির পূর্বাভাস বোঝানো হয়। যখন ‘অনেক স্থানে’ বৃষ্টি হবে বলা হয় তখন মূলত ৬১-৭৫ শতাংশ এলাকার কথা বোঝানো হয়।

পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
গতকাল রোববার ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙামাটি, নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে গেছে। যদিও গতকালের বৃষ্টির পর ঢাকায় তাপমাত্রা আজ খুব একটা কমেনি।