‘এ্যালা নালা হয়া বেশি যন্ত্রণা হইছে’

রংপুরের তারাগঞ্জ হাটের জলাবদ্ধতা নিরসনে তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়কের পাশ দিয়ে নালা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ময়লা-আবর্জনায় নালা ভরে যাওয়ায় পানিনিষ্কাশন হচ্ছে না। সড়কের সোনালী ব্যাংকের মোড়, ১২ জুন সকাল
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ ও ওকড়াবাড়ি বাজারে নির্মিত নালা দুটি কোনো কাজে আসছে না; বরং আবর্জনায় ভরা থাকা এসব নালা পরিবেশদূষণ বাড়াচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতে বাজারের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা ও পথচারীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৮টি হাটবাজার রয়েছে। তারাগঞ্জ বাজারের পর সবচেয়ে বড় বাজার ওকড়াবাড়ি। এখানে তিন শতাধিক ব্যবসায়ী আছেন। বাজারের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ইকরচালী-বরাতি পাকা সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী, পথচারী, রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ট্রাক, ট্রলিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে।

বাজারের পানিনিষ্কাশনের জন্য ২০১৮ সালের উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ওই সড়কের পাশ দিয়ে ওকড়াবাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে কবরস্থান পর্যন্ত ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি নালা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নালার পানি ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় এটি কাজে আসছে না। ময়লা–আবর্জনা পড়ে নালাটি ভরে গেছে। সড়কের থেকে নালা উঁচু হওয়ায় নালায় পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।

ওকড়াবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, ‘নালার পানির দুর্গন্ধে ভালো করি ব্যবসা করিবার পাওছি না। মিছ্সানা পানি হইলে হাটোত কাদা পানি জমোছে।’
বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন বলেন, ‘এই নালা কোনোয় হইচে হামার যন্ত্রণার কারণ। এটা কোনো কামোত নাগোছে না। হাটের পানিও এটা দিয়া যায় না। সউগ পানি আস্তাত জমি থাকে। রাস্তার পানির জন্য কায়ও সবজির বাজারোত আইসার চায় না। ওই জন্যে ব্যবসা বাণিজ্য খারাপ যাওছে।’

ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, মূলত বাজারের জলবদ্ধতা সমস্যা দূর করার জন্য এই নালা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সড়কের থেকে নালা বেশি উঁচু হওয়ায় ও পানিনিষ্কাশনের জায়গা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে। নালায় জমে থাকা পানিও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে পথচারীদের নাক-মুখ চেপে সড়কের ওই অংশে চলাচল করতে হচ্ছে।

উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট তারাগঞ্জ। প্রতিবছর এ হাট থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা রাজস্ব আসে। এ হাটের পাশ দিয়ে চলে গেছে তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়ক। ওই সড়ক ধরে দুই উপজেলার হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। দিনরাত চলাচল করে শত শত রিকশা-ভ্যান, অটো-সিএনজি, মিনিবাস, ট্রাক, টেম্পো, কার ও মোটরসাইকেল। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে হাটের আশপাশে গড়ে ওঠা সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয় ওই সড়ক দিয়ে। ২০২০ সালে ওই সড়কের পাশ দিয়ে কেল্লাবাড়ি থেকে নতুন চৌপথী পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে বাজারের পানিনিষ্কাশনের জন্য নালা নির্মাণ করা হয়।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টিতে নালা ভরে গিয়ে বাজারের অলিগলিতে পানি ঢুকে পড়ে। অপরিকল্পিতভাবে নালা নির্মাণ করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া নালাটি যথাসময়ে এবং নিয়মিতভাবে পরিষ্কার না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, নালার উপচে পড়া পানিতে হাটের বিভিন্ন অলিগলিতে কাদার সৃষ্টি হয়েছে। তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়কেও পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও পথচারীরা।

এ বিষয়ে কথা হয় থানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক সুজালুল রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু বর্ষা নয়ন শুকনা মৌসুমেও নালার নোংরা পানি সড়কে জমে দুর্গন্ধ ছড়ায়। নাক-মুখ চেপে ধরে পথচারীদের চলাচল করতে হয়। এই সড়ক দিয়ে সকালে বাচ্চাদের স্কুল পাঠাতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’

বাজারের ফলের দোকানি প্রশান্ত রায় বলেন, ‘অযথা এটে কোনা নালাটা বানে থুইছে। এটা তো কোনো কামোতে আইসোছে না। এটে নালা না থাকি যতটা যন্ত্রণা হচলো। এ্যালা নালা হয়া তার থাকি বেশি যন্ত্রণা হইছে। পচা পানির দুর্গন্ধের জন্যে হামাক নাক-মুখ ঢাকি ব্যবসা করির নাগোছে।’

কুর্শা ইউপির চেয়ারম্যান আফজালুল হক বলেন, তারাগঞ্জ হাটের সমস্যাগুলো নিয়ে উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা করা হয়েছে। খুব শিগগির ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে নালাটির ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করে দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মদ হায়দার জামান মুঠোফোনে বলেন, হাটের ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। হাট দুটির সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। খুব শিগগির এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।