ওই বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
ফাইল ছবি।

ঘটনার ৭২ ঘণ্টার পরে ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার নির্দেশনা কেন দিয়েছেন, সে বিষয়ে বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ওই বিচারক আইন ও সংবিধান দুটোই লঙ্ঘন করেছেন। সে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপগুলোও গ্রহণ করা হবে।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার গত বৃহস্পতিবার আলোচিত রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেন। রায় ঘোষণার সময় তিনি পুলিশকে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের মামলা না নেওয়ার কথা বলেন। তাঁর এই বক্তব্য ন্যায়নীতির পরিপন্থী বলে উদ্বেগ জানান মানবাধিকারকর্মীরা। আজ রোববার সকালে ওই বিচারককে আদালতে না বসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।    

পরে দুপুরে সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ঘটনার ৭২ ঘণ্টার পর ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার যে কথা বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার বলেছেন, তা বিচারকদের জন্য বিব্রতকর।
আইনমন্ত্রী বলেন, এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ভুল নির্দেশনা দেওয়া। সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল, সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেটাও সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে এগিয়ে যাবে। আইনে তাঁর যা সুবিধা…তাঁকে শোকজ করা হবে। তিনি কেন বলেছেন, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। আইনিভাবে যে প্রক্রিয়া আছে, সেটাই তাঁর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আনিসুল হক বলেন, কোনো ফৌজদারি অপরাধের মামলা করার বিষয় তামাদি হয় না। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর ২১ বছর কোনো মামলা হয়নি। ১৯৯৬ সালের এই মামলার প্রথম এফআইআর হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা বাংলাদেশে সাময়িকভাবে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির বিরুদ্ধে বা পক্ষে একমাত্র আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। অথচ রেইনট্রি হোটেলে দুই নারীকে ধর্ষণ মামলার বিচারক বলেছেন, ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর মামলা নেওয়া যাবে না। তাঁর এই বক্তব্যটি আইন ও সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে দেওয়া মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। ওই বিচারক আইন ও সংবিধান দুটোই লঙ্ঘন করেছেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই লঙ্ঘনের তাৎপর্যটা কী? অনেক রায় আছে যেগুলো হয়তো বেআইনি হয়, আপিল বিভাগে গিয়ে বাতিল হয়। এখানে তিনি যে কথাটা বলেছেন, সেটার একটা ইপ্লিকেশন আছে, একটা কনসিকিউয়েন্স আছে। এ কারণেই আজকে বিচার বিভাগের যিনি অভিভাবক, যিনি প্রধান তাঁকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ঠিক সে কারণেই আমি আইনমন্ত্রী হিসেবে গতকাল বলেছিলাম, প্রধান বিচারপতির কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেব।’

আনিসুল হক বলেন, বিজ্ঞ বিচারকেরা প্রতিদিনই কিন্তু রায় দেন। রায়ে কেউ সন্তুষ্ট হন, কেউ অসন্তুষ্ট হন। যাঁরা অসন্তুষ্ট হন, ফৌজদারি কার্যবিধি ও সংবিধান অনুযায়ী তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। সেই আপিল বিভাগের সাংবিধানিক কিছু বাড়তি ক্ষমতাও আছে। সেগুলো তাঁরা প্রয়োগ করেন। রায় দিলেই যে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা নয়। তাঁরা মেরিটের ওপর, আইনের ওপর, রায় দেওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু এখানে যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে একজন বিজ্ঞ বিচারক তিনি ওপেন কোর্টে রায় দেওয়ার সময় তাঁর পর্যবেক্ষণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছেন, ৭২ ঘণ্টা পর কেউ যদি কোনো ধর্ষণ মামলা করতে আসে, তাহলে সেই মামলাটা গ্রহণ না করতে। এটাই হচ্ছে আপত্তির জায়গা।

বিচারকের পর্যবেক্ষণের কারণে কোনো ভুল বার্তা যাবে কি না, এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার বা নির্বাহী বিভাগ যদি বিচারকের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার না করত, বিচার বিভাগ যদি পদক্ষেপ না নিত, তাহলে ভুল বার্তা হয়তো যেত। কিন্তু এই পদক্ষেপ নেওয়ার পর ভুল বার্তা যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে তিনি মনে করেন না।