ওই হাসির পরেই ছিল কান্না: পদ্মা সেতুর অনুষ্ঠান নিয়ে জাফরুল্লাহ

‘ত্রাণ নয়, পরিত্রাণ চাই’ শিরোনামে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ৩০ জুন
ছবি: দীপু মালাকার

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার বন্যার্তদের নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের এক কর্মসূচিতে জাঁকজমকপূর্ণ ওই অনুষ্ঠানের সমালোচনা করেছেন তিনি।

দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ত্রাণ নয়, পরিত্রাণ চাই’ শিরোনামে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের দল গণ অধিকার পরিষদ।

সেখানে বক্তব্যে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্দশার কথা উল্লেখ করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে আলোচনায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও তখন সারা দেশ পানিতে ভাসছে, সুনামগঞ্জ, সিলেটের মানুষের অনেকেই খাবার পাচ্ছে না। এই কঠিন সময়েও মানুষ হেসেছে। হাসি ছিল আমাদের মনে। প্রধানমন্ত্রীর হাসি হাসি মুখ, তাঁর কাহিনি শুনেছি আমরা। কিন্তু হাসির পরেই ছিল কান্না। সবার চিন্তা ৮ বা ৯ তারিখ ঈদ হবে, বাচ্চাটা নতুন কাপড় পাবে না। এক টুকরা মাংস তো জুটবে না, পোলাও তো দূরের কথা, এক টুকরা আলুও জুটবে না। ৩০ লাখ পরিবার নীরবে নিভৃতে কাঁদছিল।’

গত ২৫ জুন মাওয়ায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সেখানে বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন। জাতি এতে গৌরবান্বিত। প্রধানমন্ত্রী প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, যেমনটা তাঁর বাবা প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন ৭ মার্চে (১৯৭১ সাল)।

বক্তব্যে নতুন অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা নেই উল্লেখ করে সে জন্য সরকারের সমালোচনা করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভুলটা যেটা করছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বোকা বানাচ্ছেন। একটা বাজেট করেছেন, আপনাদের যদি সময় থাকে, কেউ যদি পড়ে থাকেন, একটি শব্দও নেই কী করে গণতন্ত্র আসবে দেশে, সুষ্ঠু নির্বাচন আসবে। এর কোনোটাই নেই। উনারা এটা দখল করে রাখবেন।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাজেটে ক্ষুদ্র খামারি, শ্রমিকদের জন্য জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। বাংলাদেশে এসেছিল ১২ থেকে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা, এখন হয়ে গেছে ২৫ লাখ, রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ নেই। আগামী ১০ বছরে সংখ্যাটি আরও বাড়বে।

সমাবেশে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘নুরদের যে কথা বলতে চাই, তোমাদের সামনে কঠিন পথ, বন্ধুর পথ। এটা থেকে সরে গেলে চলবে না। আমাদের সব সময় রাস্তায় থাকতে হবে। রাস্তা দখল করে রাখতে হবে। সরকারকে বাধ্য করতে হবে অধিকার ফেরত দিতে। বাংলাদেশকে ১৫ থেকে ১৭টি প্রদেশে ভাগ করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে, এখানে উপস্থিতদের দু-একজন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যেতে পার। উদাহরণ সৃষ্টি করবে। ঘুষ, দুর্নীতি কমাবে। তোমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমাদের ভবিষ্যতের বিজয় পথে আমি তোমাদের সঙ্গে আছি।’

বক্তব্যে নুরুল হক বলেন, ‘আড়াই কোটি মানুষ বন্যায় পানিবন্দী। ২০০ কোটি টাকা নাকি খরচ হয়েছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনে। সরকার গণমাধ্যমসহ সবকিছুকে ব্যস্ত রেখেছে পদ্মা সেতুতে। পদ্মা সেতু নিয়ে বাড়াবাড়ি করায় এখন মানুষ বিরক্ত। দুই মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়ে, নির্দেশনা দিয়ে ১০ লাখ মানুষকে নিয়ে সরকার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসব করতে চেয়েছিল। অথচ এক লাখ লোকও নাকি হয়নি।’

নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানান নুরুল হক। তিনি বলেন, মেরুদণ্ডওয়ালা রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বন্যায় ত্রাণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন নুরুল হক। বন্যাকবলিত এলাকায় কতজন মন্ত্রী গেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বর্তমান সরকারের পতন ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই বলে মন্তব্য করেন নুরুল হক। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সম্মিলিতভাবে না হলেও আলাদা আলাদা ব্যানার নিয়ে সরকার পতনের দাবিতে রাস্তায় নামতে হবে।

সমাবেশে গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, ফারুক হাসান, সাদ্দাম হোসেন, আবু হানিফ, শহীদুল ফাহীম, শাকিলউজ্জামান, অধ্যাপক ড. মালেক ফরাজী, মেজর (অব.) আমিন আফসারী, সহকারী আহ্বায়ক তামান্না ফেরদৌস, যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রহমান, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।