ওরা দুরন্ত-দুর্বার

মোসাম্মৎ মরিয়ম, খাদিজা সুরাইয়া
মোসাম্মৎ মরিয়ম, খাদিজা সুরাইয়া

খাদিজা সুরাইয়ার বাবা সংবাদপত্র বিক্রয়কর্মী (হকার)। মোসাম্মৎ মরিয়মের বাবা রাজমিস্ত্রির জোগালি। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাঁদের। তবু দমে যায়নি মেয়ে দুটি। এবার এসএসসি পরীক্ষায় দুজনেই জিপিএ-৫ পেয়েছে।
খাদিজার বাড়ি যশোরের অভয়নগর উপজেলার গুয়াখোলা গ্রামে। বাবার নাম আজাহার আলী বিশ্বাস। খাদিজা নওয়াপাড়া পাইলট বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাঁর স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে স্বপ্ন পূরণ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে সে।
খাদিজা সুরাইয়া বলে, ‘যত কষ্ট হোক আমি ডাক্তার হতে চাই। এ জন্য একটা ভালো কলেজে ভর্তি হতে হবে। প্রয়োজনে টিউশনি করব। তবু ডাক্তার হওয়ার চেষ্টা করে যাব।’
খাদিজার বাবা আজাহার আলী বিশ্বাস বলেন, ‘হকারির টাকায় সংসার ঠিকমতো চলে না। তার ওপর বড় মেয়েটা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ছোট মেয়ে খাদিজাকে ভালো কলেজে পড়ানো দরকার। শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হবে কি না জানি না। তবে আমার সীমিত আয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব।’
নওয়াপাড়া পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘খাদিজা অত্যন্ত মেধাবী। তার আচার-আচরণও খুব ভালো। সে খুবই গরিব। একটু সহায়তা পেলে তার মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে।’
মরিয়মের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার নলী গ্রামে। বাবা আলমগীর হোসেন। কাজ থাকলে দিনে ২৫০ টাকা পান। তাই দিয়ে পাঁচজনের সংসার চালান। মরিয়ম নিম্ন মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পায়। এরপরও দারিদ্র্যের কারণে বাবা তাকে আর না পড়িয়ে বিয়ে দিতে চান। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলমগীরের মনোমালিন্য হয়। রাগ করে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি যান রাজিয়া। তিন মাস বন্ধ থাকে মরিয়মের পড়াশোনা। পরে মরিয়মের স্কুলের শিক্ষক জান্নাতুন নাহার তাঁর বাড়িতে যান। তিনি মরিয়মকে বিনা বেতনে পড়ানোর কথা বলে স্কুলে নিয়ে যান। সেই মরিয়ম এবার বরগুনা সদর উপজেলার নলী মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মরিয়ম বলে, ‘কোনো দিন এক বেলা কোনো দিন দুই বেলা না খাইয়্যা স্কুলে গেছি। স্যারেরা বিনা পয়সায় পড়াল্যাহা করাইছে। ভালো ফল অইছে কিন্তু হ্যাতে লাভ অইবে কী! আমার বাপের তো সাধ্য নাই কলেজে পড়ানোর। কলেজে ভর্তি, বইপত্র কত্তো খরচ!’
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কত্তো কষ্ট অইলে বাবা তার সন্তানরে বোঝা মনে করে! সবাই কয় তোমার মাইয়্যা ভালো রেজাল্ট করছে মিষ্টি খাওয়াও। আমি লজ্জা পাই। মানষে জিজ্ঞাস করে মাইয়্যারে পড়াবা কোন কলেজে। আমি জবাব দেতে পারি না।’
মরিয়মের বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন নাহার বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা দিয়ে মেয়েটিকে এই পর্যন্ত এনেছি। এখন সমাজের সবার উচিত ওর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।’