প্রথম আলো জরিপ: ঢাকায় চিকুনগুনিয়া—এই শিরোনামে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজের মাধ্যমে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। ১২ থেকে ১৫ জুলাই চার দিনে নির্দিষ্ট ছকে পাঠকেরা জরিপে অংশ নেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাঠক অংশগ্রহণ করেন মশার ওষুধ দেওয়াসংক্রান্ত প্রশ্নে
প্রথম আলোর চিকুনগুনিয়াবিষয়ক জরিপে একটি প্রশ্ন ছিল, ‘শেষ কবে মশার ওষুধ দিতে দেখেছেন বা শুনেছেন’। এ প্রশ্নের উত্তরে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। জরিপে প্রায় ৫৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী গত দুই মাসের মধ্যে মশার ওষুধ দিতে দেখেননি। বিপরীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ২৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলছেন, সর্বশেষ এক সপ্তাহে তাঁরা মশার ওষুধ দিতে দেখেছেন।
সারা বছরই রাজধানীর বাসিন্দারা নিয়মিত মশার ওষুধ না দেওয়ার অভিযোগ করেন। সম্প্রতি চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ায় এবং দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মকাণ্ড ব্যাপক সমালোচিত হওয়ায় কয়েক দিন ধরে সিটি করপোরেশন বেশ জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। গত এক সপ্তাহে মশার ওষুধ দিতে দেখেছেন এমন উত্তরদাতার সংখ্যা বাড়ার এটি অন্যতম কারণ।
জরিপে মোট ৭ হাজার ৩০ জন অংশ নেন। শেষ কবে মশার ওষুধ দিতে দেখেছেন বা শুনেছেন—এমন প্রশ্নের চারটি উত্তর দেওয়ার সুযোগ ছিল। ১ সপ্তাহের মধ্যে, ১ মাসের মধ্যে এবং ২ মাসের মধ্যে দেখেনওনি, শোনেনওনি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৩৪ জন বলেন, দুই মাসের মধ্যে মশার ওষুধ দিতে তাঁরা দেখেননি বা শোনেননি।
১ মাসের মধ্যে মশার ওষুধ দিতে দেখেছেন ৯৪০ জন, ২ মাসের মধ্যে দেখেছেন ৩৫৫ জন আর ১ সপ্তাহের মধ্যে মশার ওষুধ দিতে দেখেছেন ১ হাজার ৬০১ জন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা বেশি ছিলেন। মশার ওষুধ দিতে না দেখার অভিযোগও উত্তরের বাসিন্দাদের বেশি। জরিপে অংশ নেওয়া উত্তর সিটির প্রায় ৬৪ শতাংশ বাসিন্দা বলেছেন, তাঁরা দুই মাসের মধ্যে মশার ওষুধ দিতে দেখেননি।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মন্তব্য লেখার সুযোগ ছিল। সেখানে অধিকাংশ মন্তব্যই ছিল মশার ওষুধ না দেওয়ার অভিযোগকেন্দ্রিক। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাঁরা মন্তব্য করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই অভিযোগ করেন, এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ দিতে তাঁরা দেখেননি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় চিকুনগুনিয়া এবং মশার প্রকোপ নিয়ে লেখালেখি হওয়ায় কোথাও কোথাও মশার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে বলেও অংশগ্রহণকারীরা মন্তব্য করেন।
ফেরদৌস আহমেদ নামের এক অংশগ্রহণকারী লিখেছেন, ‘গত চার–পাঁচ বছরে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি। তবে সংবাদপত্রে লেখালেখির পর দুদিন আগে একবার ছিটানো হয়েছে।’ রুহুল আমিন নামে আরেক ব্যক্তি লেখেন, ‘দু–তিন মাস পর গতকাল স্প্রে করেছে। তার মধ্যে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।’
শুধু বাসিন্দারা নয়, উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররাও বিভিন্ন সময়ে মশার ওষুধ দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেছেন। তখন মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করত করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। কাউন্সিলররা মশক নিধনের দায়িত্ব তাঁদের দেওয়ার দাবি জানালে গত ২২ জুন তা তাঁদের দিয়ে দেওয়া হয়।
রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ মশার ওষুধ দিতে না দেখলেও সিটি করপোরেশন প্রতিবছরই মশার ওষুধ বাবদ বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে যাচ্ছে। মশক নিধন কার্যক্রমে দুই সিটি করপোরেশন গত তিন অর্থবছরে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে ডিএনসিসি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় করে। মশক নিধন বাবদ খরচে খুব বেশি পিছিয়ে নেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি)। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটে এ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
তবে প্রতিদিন কোন কোন এলাকায় মশার ওষুধ দেওয়া হয়, তা নিয়ে লুকোচুরি আছে দুই সিটি করপোরেশনেরই। ‘চিকুনগুনিয়া: প্রধান শত্রু মশা, মূল দায়িত্ব সিটি করপোরেশন ও আপনার’ শিরোনামে প্রতিদিন একটি সচেতনতামূলক প্রচার ও মশা নিধন কার্যক্রমের তথ্য সরবরাহের পরিকল্পনা করেছিল প্রথম আলো। উদ্দেশ্য ছিল, প্রতিদিন কোন কোন এলাকায় সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটাবে, তার তালিকা প্রকাশ করা। কিন্তু এক মাস ধরে চেষ্টা করেও দুই সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হবে এমন এলাকার তালিকা পাওয়া যায়নি। দুই সিটি করপোরেশনই তালিকাটি ‘দিচ্ছি, দিব’ করে আর দেয়নি প্রথম আলোকে।