ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় রিড ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিকসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার ড্রাগ আদালতের বিচারক এম আতোয়ার রহমান এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যথাযথ আইন অনুসরণ না করে মামলাটি করে চরম অবহেলা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এই ত্রুটিপূর্ণ মামলার কারণে আসামিরা খালাস পেয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতায় সব আসামি খালাসের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মদ নাদিম প্রথম আলোকে বলেন, মামলার রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে সারা দেশে ২৮টি শিশু মারা যায়। এ ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকার ড্রাগ আদালতে ওষুধ কোম্পানিটির মালিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
গতকাল রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মামলাটি করার ক্ষেত্রে ১৯৮০ সালের ড্রাগ আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি। মামলায় যথাযথভাবে আলামত জব্দ করা, তা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে প্রেরণ এবং রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন আসামিদের দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে ড্রাগ আইনের ২৩ ও ২৫ ধারা লঙ্ঘন করেছে অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলামও আইন না মেনে ত্রুটিপূর্ণ এ মামলা করেছেন। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়নি। রায়ে আরও বলা হয়, যে চিকিৎসকের কাছ থেকে ভেজাল ওষুধের নমুনা নেওয়া হয়েছিল, তাঁকেও মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। ওই ভেজাল ওষুধ আসামির প্রতিষ্ঠান থেকেও জব্দ করা উচিত ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৯ মার্চ ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির অভিযোগে রিড ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অপর চারজন হলেন মিজানুর রহমানের স্ত্রী রিড ফার্মার পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আবদুল গনি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক। গত ১৯ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। গতকাল রায় ঘোষণার সময় মিজানুর রহমান ও শিউলি রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি তিনজন পলাতক।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, এ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন শিশুবিশেষজ্ঞ এ আর খান। তিনি সাক্ষ্যতে বলেছিলেন, ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে ওই হাসপাতালের নেফ্রলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মো. হানিফ তাঁকে জানান, অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু কিডনি বিকল হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। শিশুদের প্রায় সবাই বৃহত্তর কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা। প্রথমে শিশুদের জ্বর ও বমি হয়। পরে শিশুদের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে শিশুরা মারা যায়।