কওমি শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন মন্ত্রিসভা থেকে প্রত্যাহার

‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৩’-এর খসড়া গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিবেচিত বিষয়ের (এজেন্ডা) তালিকা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মনে করছি, বিষয়টি আরও যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়নি। যাচাই-বাছাইয়ের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
প্রস্তাবিত আইনের খসড়া অনুযায়ী, ১৬ সদস্যবিশিষ্ট কওমি শিক্ষা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হবেন কওমি শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ একজন শীর্ষ পর্যায়ের আলেম। এতে কওমি শিক্ষার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় সাতজন আলেম, যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন সরকারের প্রতিনিধি, মহিলা কওমি মাদ্রাসার একজন প্রতিনিধি ও পাঁচটি কওমি মাদ্রাসার প্রধান বা সচিব পদাধিকারবলে কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন এবং একজন সচিব থাকবেন। ইতিমধ্যে এ আইনের খসড়া অর্থ, জনপ্রশাসন ও প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
কওমি আলেমদের একটি অংশ শুরু থেকেই সরকারের কওমি শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছেন। গত রোববার হেফাজতে ইসলামের আমির ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আহমদ শফী বলেছেন, কওমি মাদ্রাসা আইন পাস হলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। তিনি আইনটি পাস করা থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
কওমি কর্তৃপক্ষের সমর্থনে সংবাদ সম্মেলন: গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে কওমি ছাত্র-শিক্ষক কল্যাণ পরিষদ এ ধরনের উদ্যোগ সমর্থন করে সংবাদ সম্মেলন করে। তাদের দাবি, ভারতে দেওবন্দ মাদ্রাসার আটটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ১৫ সদস্যের কওমি শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এঁদের ১৪ জনই হবেন কওমি আলেম। সংশোধিত কওমি শিক্ষা কর্তৃপক্ষের বিষয়ে মাওলানা আশরাফ আলী, আনওয়ার শাহ, আবদুল হালিম বোখারি, মাহমুদুল হাসান প্রমুখ বিশিষ্ট আলেমের সমর্থন আছে বলেও জানানো হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণার্থীরা অংশ নেন। কওমি ছাত্র-শিক্ষক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ চৌধুরী লিখিত বক্তব্য পড়েন।
জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কিছু সংশোধনী দিয়েছি। তাতে সরকার কোনো উসুলি (মৌলিক) পরিবর্তন আনলে সমর্থন করব না।’ আর চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসার পরিচালক আবদুল হালিম বোখারি সমর্থনের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘সরকার কী সংশোধনী এনেছে, তা হাতে পেলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
প্রত্যাখ্যান করেছে বেফাক: বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের প্রস্তাবিত ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৩’ প্রত্যাখ্যান করেছে।
বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার বলেন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ প্রতিরোধে প্রয়োজনে রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বাধীন কোনো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত হবেন না।