কক্সবাজারে দখল-দূষণের ‘প্রতিযোগিতা চলছে’

প্যারাবন উজাড় করে মাটি ও বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে বাঁকখালী নদী। গত রোববার কক্সবাজার শহরে নদীর কস্তুরাঘাট অংশে
ছবি: প্রথম আলো

দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা কক্সবাজারে দখল ও দূষণের প্রতিযোগিতা চলছে। বন, পাহাড়, নদী থেকে সমুদ্র কোনো কিছুই দখলদারদের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। উচ্চ আদালতের নির্দেশ ও রায় অমান্য করে একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বেসরকারি খাতের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান তো বটেই, এমনকি সরকারি সংস্থাগুলো এসব ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।

বুধবার কক্সবাজারের একটি হোটেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বেলা এবং ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) আয়োজিত ‘পরিবেশ প্রতিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সম্মেলনে জানানো হয়, কক্সবাজারের পরিবেশ রক্ষায় বেলা থেকে এ পর্যন্ত ১৯টি মামলা হয়েছে। তার অনেকগুলোতে রায় ও আদেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। কিন্তু সেসবের বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কক্সবাজারকে বাঁচাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন চেয়েছেন বক্তারা।

সম্মেলনে কক্সবাজারের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাংবাদিকেরা মিলে শহরের বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেন। তারা জানান, শহরটির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঁকখালী নদী দখল করে কেউ করেছেন আবাসন ব্যবসা, কেউবা বানিয়েছেন চিংড়ি ঘের। প্যারাবন কেটে তৈরি হচ্ছে হোটেল-মোটেল। দখল-দূষণে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। পাহাড় সাবাড় করে চলছে স্থাপনা নির্মাণ। এভাবে দিনে দিনে দখল হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের পাহাড়, বন ও নদী। দখলদারের তালিকায় আছেন রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ অনেক প্রভাবশালী।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আল আমিন পারভেজ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) সারওয়ার আলম, কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহেনা আক্তার পাখি, জেলা পরিষদের সদস্য আসমাউল হুসনা, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজমুল হুদা, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা, ইয়েস-এর প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ডে কক্সবাজারের প্রতিবেশ ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকিতে। আইন ও নীতিমালার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এখানকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিনাশে নেমেছেন কিছু অবিবেচক প্রভাবশালী মহল। অনেক ক্ষেত্রেই আবার সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কক্সবাজারের পরিবেশ।

তিনি বলেন, কক্সবাজারের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় সমুদ্র, সমুদ্র তীর, নদী, পাহাড়, বন সংরক্ষণ করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বার বার উপেক্ষিত হচ্ছে। যারা দখলদারদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা নানাভাবে হুমকি-ধমকি, মামলা ও আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছেন। কক্সবাজার সারা বাংলাদেশের গর্ব। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদ কক্সবাজারে পরিবেশ রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি কক্সবাজারের ৭০০ একর বনভূমি প্রশাসন ক্যাডারের নামে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে বলেন, এ ধরনের বনভূমি এভাবে বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নেই।

ফোরকান আহমদ বলেন, ‘আমার কাছে অবৈধ দখলদারদের তালিকা আছে। মাঝে মাঝে মন চায় সব দখলদারের তালিকা জনসভা করে জনগণকে জানিয়ে দেই। কিন্তু আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, কিছুই করতে পারছি না। অনেক কিছু বলার থাকে, কিন্তু বলা যায় না। বড় বড় রথী-মহারথীদের অবৈধ দোকান-পাট আছে। আমরা সমন্বিতভাবে কক্সবাজারের পরিবর্তন চাই।’