কনোকোফিলিপসের সঙ্গে আপাতত আর পিএসসি নয়

.
.

সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কনোকোফিলিপসের সঙ্গে আপাতত আর কোনো উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) করতে আগ্রহী নয় সরকার। কারণ, সরকার মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানিটি ইতিমধ্যে সই হওয়া পিএসসি অনুযায়ী গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে কাজ করছে না।
অপর দিকে কনোকোফিলিপস বলছে, ওই দুই ব্লকে জরিপ চালিয়ে তারা দেখেছে, সেখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা গড়ে ২০ শতাংশ। তাই সেখান থেকে গ্যাস তুলতে ব্যয় বেশি হবে। এ কারণে গ্যাসের দামও পিএসসিতে উল্লিখিত দামের চেয়ে বেশি হবে। এই অবস্থায় সরকার পিএসসি সংশোধন করে গ্যাসের দাম বাড়ালে তারা ওই দুটি ব্লকে কাজ করবে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।
কনোকোফিলিপসের একটি প্রতিনিধিদল গত মঙ্গলবারও সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। সেখানে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে আলোচনায় ইতিবাচক কিছু হয়নি বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, কনোকোফিলিপস মূলত গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছে। ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের সংলগ্ন মিয়ানমারের ব্লকগুলোর পিএসসিতে গ্যাসের দাম অনেক বেশি। এর আগে পেট্রোবাংলার কাছে তারা এ ব্যাপারে একটি লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লাগবে।
সরকারের সঙ্গে কনোকোফিলিপসের আলোচনার বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সমুদ্রবক্ষের আরও চারটি তেল-গ্যাস ব্লকের পিএসসি। এর মধ্যে তিনটি গভীর ও একটি অগভীর সমুদ্রের ব্লক। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় এই সব কটি ব্লকেই তেল-গ্যাস অনুসন্ধান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনোকোফিলিপস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টমাস জে আর্লে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন৷
১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে পিএসসির শর্ত অনুযায়ী কাজ না করা প্রসঙ্গে টমাস বলেন, প্রায় দুই কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে ব্লক দুটির পাঁচ হাজার ৯০০ লাইন কিলোমিটার এলাকায় দ্বিমাত্রিক জরিপ চালানো হয়েছে। তাতে ১১ নম্বর ব্লকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাসের অবস্থান চিহ্নিত হলেও তা রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাঠামোয়৷ সেখানে অনুসন্ধান কূপ খননের ঝুঁকি ও ব্যয় সম্পর্কে তাঁরা সরকারকে জানিয়েছেন। এখন সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে তাঁদের কাজ।
অগভীর সমুদ্রের ৭ নম্বর ব্লকে যোগ্য নির্বাচিত হয়েও পিএসসি সই করতে সম্মত হয়নি কনোকোফিলিপস৷ এ প্রসঙ্গে টমাস অভিযোগ করেন, এই ব্লকটির জন্য পিএসসি সইয়ের আগের প্রক্রিয়ায় সরকার অনেক বেশি সময় নিয়েছে। ফলে অনুসন্ধান কার্যক্রমের ব্যয় বেশি পড়ত।
গভীর সমুদ্রের ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লকের জন্য পিএসসি সই হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে টমাস বলেন, গত ১২ জানুয়ারি তাঁরা দরপ্রস্তাব দিয়েছেন। এখন পিএসসি সইয়ের জন্য সরকারের চূড়ান্ত আহ্বানের অপেক্ষায় আছেন। এই তিনটি ব্লকে কনোকোফিলিপসের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে আছে নরওয়ের কোম্পানি স্টেটঅয়েল।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে পিএসসি অনুযায়ী অনুসন্ধান কূপ খনন না করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য তৎপরতা চালানো এবং ৭ নম্বর ব্লকের জন্য যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করার পরও পিএসসি সই না করে দরপ্রস্তাব তুলে নেওয়ায় সরকার কনোকোফিলিপসের কার্যক্রম সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তাই তাদের সঙ্গে নতুন কোনো পিএসসি আপাতত করা হবে না৷ ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের জন্য পিএসসি সংশোধন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সম্ভাবনাও কম।