কন্যাশিশু নয়, বলা হোক মেয়েশিশু

অনেকে বলছেন, মেয়েশিশু দিবসের বদলে কন্যাশিশু দিবস নামকরণ সমাজের একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।

একটি মেয়ে পরিবারের একমাত্র কন্যা, নাকি ছয় বা আট ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র বোন, সেটা বড় কথা নয়। দিনের শেষে শুধু মেয়ে হওয়ার কারণেই সে পরিবারের একমাত্র গৃহকর্মী। কথাটি মর্মে মর্মে বুঝেছি আমার অকালমৃত বোনটিকে দেখে। সবাইকে ফেলে রেখে হঠাৎ করে কম বয়সে চলে গিয়েছিলেন বুবু। জন্ম ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৫ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে, মৃত্যু ২৭ নভেম্বর ১৯৬৬ সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে। মাত্র ২১ বছর বয়সে বিদায়।

কম বয়সী এই বুবু কত যে কাজ করতেন সারা দিন, তা হাড়ে হাড়ে টের পাই তার চলে যাওয়ার পরে। বিদ্যুৎ তখন আমাদের সীমিত আয়ের মধ্যবিত্ত পরিবারের নাগালে ছিল না। লন্ঠনের আলোয় রান্না, লেখাপড়া, চলাফেরা, অতিথি আপ্যায়ন—সব চলত। সন্ধ্যার আগে পাঁচ–সাতটা লন্ঠনের কাচ পরিষ্কার করে তেল ভরে মাগরিবের আজানের সামান্য আগে সেগুলো জ্বালানো হতো। বিকেলে খেলা শেষ হওয়ার আগেই মাঠ থেকে আমাকে ফিরে আসতে হতো এ কাজ সারার জন্য। আমাকে তাই কেউ খেলায় নিতে চাইত না। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত বুবু প্রতিদিন এ কাজটা করে যেতেন নিঃশব্দে। আমরা ছয় ভাই কোনো দিন তা টের পাইনি বা আমলে নিইনি।

‘কন্যাশিশু’ শব্দবন্ধটি বদ্ধমূল হওয়ার পথেই যেন এগিয়ে চলেছে। এ নামে ‘আন্দোলন’ আন্দোলিত হচ্ছে মৃদুমন্দ বাতাসে, আর ফুলে–ফেঁপে উঠছে নানা সংগঠন। আর এসব ভুল শব্দ ঠাঁই পেয়ে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়ে, অধিদপ্তরে—সর্বত্র।

সন্ধ্যার আগে হাঁস-মুরগিগুলোকে ঠিকমতো তাদের ঘরবন্দী করা, ছাগলগুলোকে খাবার দিয়ে গলায় দড়ি পরিয়ে ঢেঁকিঘরের পাশে বেঁধে রাখার কাজও কম ঝামেলার ছিল না। শীতের দিনে এসব ছাগলের জন্য চটের জামা বা আসনের ব্যবস্থা করতে হতো। সকালে পরিষ্কার করতে হতো সেগুলো। পৌষ–মাঘের হাড়–কনকনে ঠান্ডার দিনগুলোতে নিরাপদ আগুনের ব্যবস্থা করতে হতো।

বুবুর কাজের তালিকা কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। ভাইদের কাপড়চোপড়, বিশেষ করে স্কুলের জামা ধোপদুরস্ত করে রাখার কাজটি করতে হতো তাকেই। আমাদের সবার ছোট ভাইটির পটি করানো থেকে শুরু করে ঘুমপাড়ানো ছিল তার জন্য বাঁধা।

আমরা দাদা-দাদির সঙ্গে থাকতাম। এই দুই প্রবীণের দেখাশোনার কাজটিও তাঁর কর্মতালিকাতেই ছিল। দাদি চোখে ভালো দেখতেন না। তাঁর দৈনন্দিনের সিংহভাগ কাজ বুবুকেই সামলাতে হতো। ফুফু–চাচারা তাঁদের বালবাচ্চা নিয়ে দাদা–দাদিকে দেখতে আসতেন। এসব প্রাপ্তবয়স্ক বয়োজ্যেষ্ঠ বাপের বাড়িতে এসে কুটোটি পর্যন্ত দাঁতে কাটতেন না। তাঁদের বাচ্চা-কাচ্চার বেবিসিটার হয়ে যেতেন বুবু। যেনতেন বেবিসিটার নয়, পদে পদে প্রমাণ করতে হতো, বুবু আমার অনেক বড় হয়েছে। সাত চড়ে রা করে না। সবকিছু সামলে চলতে জানে।

আমাদের সবার এ কাজগুলো কেন তাঁকেই করতে হতো? শুধুই বাড়ির মেয়েটি বলে। বোধ করি খুবই অল্প বয়স থেকেই এসবের শুরু।

এসবের মধ্যেই বুবুকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হতো। পরীক্ষায় খারাপ করলে রক্ষা ছিল না। বুবু যখন চলে গেলেন, তখন তিনি বিএ তৃতীয় বর্ষে। ছয় মাস পরে ছিল ফাইনাল পরীক্ষা। সবকিছু সামলে রোগা শরীরের বুবু কী করে পড়াশোনার মতো কঠিন কাজটা চালিয়ে যেতেন, ভাবতে অবাক লাগে। বুবুকে কি কখনো খেতে দেখেছি? মনে পড়ে না। বোধ হয়, আমাদের খাওয়া শেষে যা অবশিষ্ট থাকত, তা–ই খেতেন, মায়ের সঙ্গে বসে।

বছরে একবার আমরা মামার বাড়ি যেতাম। কখনো ঈদের পরে, কখনো গরমের ছুটিতে। বুবুর যাওয়া হতো না। দাদা-দাদিকে তাহলে কে দেখবে? হাঁস-মুরগি–ছাগলের কী হবে? বুবু আমাদের সাজিয়ে–গুছিয়ে দিতেন। কানে কানে বলতেন, তুই থাক, রোজ পরোটা ভেজে দেব। মামাবাড়ি গিয়ে ভাবতাম, বুবুর কী মজা! বাড়িতে একা একা রোজ পরোটা খাচ্ছে। প্রতিবার ফিরে এসে জানতে চাইতাম, কয়টা পরোটা খেয়েছিস বুবু। বুবু হাসতেন। বুবু চলে যাওয়ার পর বুঝেছিলাম, বাড়ির মেয়েদের কপালে পরোটা নেই।

বুবু চলে যাওয়ার পর খুব কেঁদেছিলাম। আমার কান্না থামাতে এসে দাদা বলেছিলেন, কান্না থামাও, এখন থেকে রোজই কাঁদতে হবে। তখন সে কথার মানে বুঝিনি। পরে যত দিন গেছে, বুঝেছি সে কথার মানে। আনাড়ি হাতে বুবুর কাজগুলো করতে না পেরে কেঁদেছি অনেক।

ইয়াসমিনের চিঠি

ইয়াসমিন নামে এক কিশোরীর একটি প্রশ্ন বুবুর স্মৃতি মনে ফিরিয়ে আনল। লন্ডনপ্রবাসী ইয়াসমিন বুঝমান মেয়ে। সে বাংলা শিখতে চায়। বছর তিনেক আগে শেষবার যখন তার ওখানে যাই, তখন তাকে ময়মনসিংহ–কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কিছু গানের সিডি দিয়ে এসেছিলাম। সেই গানই তার প্রশ্নের মূলভিত্তি। সিডির একটি গান ছিল এ রকম: ‘এক যে ছিল সোনার কন্যা মেঘবরণ কেশ/ ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ।’

ইয়াসমিনের প্রশ্ন, ‘সম্প্রতি তোমরা সরকারিভাবে গার্ল চাইল্ড ডে উদ্‌যাপন করিয়াছ—কিন্তু বলিয়াছ কন্যা দিবস। গার্ল–এর ইংরেজি তো ডটার নয়। ডটার মানে কন্যা, গার্ল মানে মেয়ে। ইহাই তো আমি শিখিয়াছি। তবে কি আমার শিক্ষা সম্পূর্ণ নহে।’ ইয়াসমিন আরও লিখেছে, ‘গান ও লোককথা হইতে জানিয়াছি, লোকজ বাংলায় “কন্যা” শব্দটি কনে অর্থাৎ বিবাহের জন্য প্রস্তুত কুমারী মেয়ে...কোনো অবস্থাতেই “মেয়ে” শব্দের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। ইহা কি অন্যায্য হয় নাই?’

ইয়াসমিনের কোটি টাকার এ প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই। আমি কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের লেখা উদ্ধৃত করে তাকে জবাব পাঠাই, ‘ভাবতে অবাক লাগে ছেলেশিশু এবং মেয়েশিশু এই সংজ্ঞা নিরূপণের ক্ষেত্রেও বৈষম্যের সূচনা করা হয়েছে। “কন্যা-শিশু দিবস” নামকরণ সমাজের একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। একটি ভুল শব্দ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মেয়েদের প্রতি সামাজিক মানসিকতার নেতিবাচক দৃষ্টিটিই প্রথমে ধরা পড়ে। মেয়েরা যেন শিশু নয়, জন্মের পর থেকেই ওরা বয়স্ক, নায়িকা কিংবা প্রেমিকা—মেয়েশিশু দিবসের নামকরণের মধ্যেও এমন একটি অরুচিকর প্রকাশের ছাপ দেখা যায়। আর কতকাল লাগবে এমন বৈষম্যের অবসান ঘটাতে।’

কন্যাশিশু নাকি মেয়েশিশু

মেয়েশিশুদের আজকাল বেশ ঘটা করে কন্যাশিশু বলা হচ্ছে। তারে, বেতারে, ছাপায়, ছবিতে। রাষ্ট্রও বলছে। এসব দেখে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন জবাব দিয়েছিলেন অনুপম ভাষায়, ‘কন্যা মানে সাধারণভাবে মেয়ে নয়, বরং ব্যক্তিবিশেষের দুহিতা।’ এরপর উদাহরণ দিয়ে সবার মনের গরল দূর করার চেষ্টা করেছেন, ‘যেমন আবদুর রহিমের কন্যা সেলিনা খাতুন। কিংবা এভাবেও বলা যায় যে, রোকেয়া বেগম একটি “কন্যা” সন্তান প্রসব করেছেন। আমাদের দেশে বিয়ের পাত্রীকেও “কন্যা” বলা হয়। বাংলা লোকসাহিত্যের নায়িকারাও ব্যাপক অর্থে “কন্যা” শব্দ দিয়ে পরিচিত।’

বলা বাহুল্য, ভুল ব্যবহার বন্ধ হয়নি। একবার চালু হলে বন্ধ করা কঠিন। ‘কন্যাশিশু’ শব্দবন্ধটি বদ্ধমূল হওয়ার পথেই যেন এগিয়ে চলেছে। এ নামে ‘আন্দোলন’ আন্দোলিত হচ্ছে মৃদুমন্দ বাতাসে, আর ফুলে–ফেঁপে উঠছে নানা সংগঠন। আর এসব ভুল শব্দ ঠাঁই পেয়ে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়ে, অধিদপ্তরে—সর্বত্র।

সেলিনা হোসেনের মতো আরও অনেকেই বলতে চান, মেয়েশিশু দিবসের বদলে কন্যাশিশু দিবস নামকরণ সমাজের একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। একটি ভুল শব্দ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মেয়েদের প্রতি সামাজিক মানবিকতার নেতিবাচক দৃষ্টিটিই প্রথমে ধরা পড়ে। মেয়েরা যেন শিশু নয়, জন্মের পর থেকেই ওরা বয়স্ক নায়িকা কিংবা প্রেমিকা, মেয়েশিশু দিবসের নামকরণের মধ্যেও এমন একটি অরুচির ছাপ দেখা যায়। আর কতকাল লাগবে এমন বৈষম্যের অবসান ঘটাতে?

অনেক আগে এ দেশে জনাব-জনাবা নিয়ে এমন একটি বাহাস হয়েছিল। পুরুষের নামের আগে ‘জনাব’ সম্মানসূচক সম্বোধন বিশেষ। কেউ একজন বিলকুল না বুঝে ‘জনাব’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ করেছিলেন ‘জনাবা’। ব্যস, তারপর থেকে লেখা হতে লাগল ‘জনাবা’। অনেক বাহাসের পর এ বিষয়ে বাতাস কিছুটা ঘুরেছে।

অনেক আগে এ দেশে জনাব-জনাবা নিয়ে এমন একটি বাহাস হয়েছিল। পুরুষের নামের আগে ‘জনাব’ সম্মানসূচক সম্বোধন বিশেষ। কেউ একজন বিলকুল না বুঝে ‘জনাব’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ করেছিলেন ‘জনাবা’। ব্যস, তারপর থেকে লেখা হতে লাগল ‘জনাবা’। অনেক বাহাসের পর এ বিষয়ে বাতাস কিছুটা ঘুরেছে।

‘কন্যা’ শব্দের দায় থেকে আমাদের মুক্তির কোনো আলামত কিন্তু এখনো নজরে আসছে না। কেউ কেউ যুক্তি দেন, কবিতায় যে মেয়েশিশুকে কন্যাশিশু বলেছেন, অমন মেয়েদের অধিকার নিয়ে রুখে দাঁড়ানো কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত, তাঁর ‘গুজরাতি কন্যাশিশু’ কবিতায়, তিনি কি লেখেননি: ‘কানা ভাঙা সানকি হাতে/ দাঙ্গার ত্রাণশিবিরে/ দাঁড়িয়েছে কন্যাশিশু/ নিষ্পাপ গুজরাতিসে/ ওকে দাও একটু রুটি/ একটু আশার আলো/ ওকে দাও পায়ের নিচে/ দাঁড়ানোর শক্ত জমি…’

আমাদের বক্তব্য, কবিতায় যে বাক্য উত্তীর্ণ হয়, তা তো সব সময় বলার বাক্যে পরিণত হয়ে যায় না। মল্লিকাই তো এই একই বইয়ে লিখেছেন মেয়েদের আরও রক্তঝরা বেদনার কথা। লিখেছেন, ‘আমি গুজারি মুসলিম মেয়ে নারদ পাতিয়া শিবিরে পালিয়ে এসেছি ধ্বংস পেরিয়ে আমাকে বাঁচতে দিবিরে।’ আরও আগে বাড়তে বাড়তে কবিতাটি পৌঁছায় এমন উচ্চারণে, ‘মেয়েটির কাছ থেকে একদিন তোমরা কেড়ে নিয়েছিলে বেদ পড়বার সুযোগও তোমরা বললে মেয়েরা শুধুই ঘরণী সংস্কৃতের অধিকারী শুধু পুরুষ মেয়েদের ভাষা, শূদ্রের ভাষা আলাদা হাজার বছর পেরিয়ে যখন মেয়েটি প্রস্তুতি নিল বালিকা বিদ্যালয়ের বেথুন এবং বিদ্যাসাগর সহায় তোমরা বললে, লেখাপড়া জানা মেয়েরা বিধবা হবেই তারপর যেই অফিসে পা দিল মেয়েটি শাশুড়ির মুখ হাড়ি হলো আর বরটি সন্দিহান তোমরা বললে, বউয়ের টাকা সংসারে কোন কাজের? ঝড়-ঝঞ্ঝার সঙ্গে মেয়ের যুদ্ধ...’

ইয়াসমিন আরও লিখেছে, ‘গান ও লোককথা হইতে জানিয়াছি, লোকজ বাংলায় “কন্যা” শব্দটি কনে অর্থাৎ বিবাহের জন্য প্রস্তুত কুমারী মেয়ে...কোনো অবস্থাতেই “মেয়ে” শব্দের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। ইহা কি অন্যায্য হয় নাই?’

এরপরের লাইনগুলো আর পড়তে পারি না। মনে পড়ে যায় আমার বুবুর কথা। ছয় ভাইয়ের একমাত্র বোনকে নিয়ে আবেগ দিয়ে, সোহাগ দিয়ে দারুণ কবিতা রচনা করা যায়। পাঠকের চোখের পানিতে জোয়ার বইয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু নির্দয় বাস্তবতা তাতে বদলায় না।

চাই মেয়েশিশুর স্বাধীন সত্তা

বাবার খুব দুশ্চিন্তা ছিল বুবুকে নিয়ে। পরিবারের কাছের–দূরের সবাইকে ছাড়িয়ে প্রথম একজন নারী পড়াশোনা করে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে খুশির বদলে কী যে আশঙ্কা সবার! বিএ পাস মেয়ের উপযুক্ত বর জোটাবেন কী করে? তার অকালমৃত্যু বাবাকে সেই দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা করেছে।

এই গ্লানির বেদনা মনে রেখে বলতে হয়, কন্যা বললে একটা দায়গ্রস্ততার ব্যাপার আসে, ভগিনি বললেও চলে আসে কিছু কর্তব্যের কথা, কিন্তু মেয়েশিশু বললে তার স্বাধীন সত্তাটি স্বীকার করে নিতে হয়। সে কারও দায় নয়, চক্ষুলজ্জার কর্তব্যও নয়। সে একজন মানুষ। সুযোগ পেলেই যেকোনো মেয়েশিশু সে থেকে তিনি হয়ে উঠতে পারেন। তাকে শুধু শক্ত জমিনে মুক্ত পায়ে দাঁড়াতে দেওয়া দরকার। তাহলেই আর কোনো কিছু তার কাছে কোনো ব্যাপার নয়। পৃথিবীটা তার।


● গওহার নঈম ওয়ারা

ই–মেইল: [email protected]