কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত বটগাছের কী হবে
আজ থেকে প্রায় ১০৬ বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এসেছিলেন কিশোর কাজী নজরুল ইসলাম। কাজী নজরুলের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে দারোগা রফিজউল্লাহ তাঁকে ভর্তি করান দরিরামপুর ইংরেজি হাইস্কুলে (বর্তমান নজরুল একাডেমি)।
প্রথমে কাজীর শিমলা দারোগা বাড়িতে থাকলেও যাতায়াতের কষ্ট লাঘবের জন্য দারোগা সাহেব নজরুল ইসলামকে ত্রিশালের নামাপাড়ায় জায়গির রাখেন। স্বাধীনচেতা নজরুল মাঝেমধ্যে স্কুল বাদ দিয়ে বটগাছের চড়ে বাঁশি বাজাতেন। যে বটগাছে বসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বাঁশি বাজাতেন, সেই গাছটিই এখন নজরুল বটবৃক্ষ নামে পরিচিত। কবি নেই, কিন্তু বটগাছটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সেই বটগাছের পাশেই শুনি বিলে ৯৩ বছর পর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমান সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে ১৪ বছরে পদার্পণ করা বিশ্ববিদ্যালয়টি পিছিয়ে না থাকলেও অনাদর–অবহেলায় বিদ্রোহী কবি নজরুলের স্মৃতিধন্য বটগাছটি।
গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি এ নাজির নজরুল স্মৃতিবিজড়িত বটগাছের গুরুত্ব অনুভব করে প্রথমবারের মতো বটগাছটি কেন্দ্র করে চারপাশে পাকা বেদি করেন। ত্রিশালের নজরুল স্মৃতিবিজড়িত সব স্থাপনার যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও বটগাছটি একেবারেই নিগৃহীত। বটগাছসংলগ্ন চায়ের দোকান আর বটগাছ চত্বর পরিণত হয়েছে চায়ের আড্ডাখানায়। এটা বড়ই বেমানান। অনেকেই বলছেন, এতে কবির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
নজরুল গবেষক এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজের উপপরিচালক রাশেদুল আনাম জানান, কালের পরিক্রমায় বটগাছ ব্যতীত নজরুল স্মৃতিবিজড়িত সব জায়গার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কার সাধিত হলেও একমাত্র জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বটগাছটি। যেহেতু নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত জমি অধিগ্রহণ করে যথাযথভাবে বটগাছটিকে সংরক্ষণ করা।
অত্যন্ত দুঃখজনক, বটগাছকে বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সীমানা নির্ধারণী প্রাচীর নির্মাণ করেছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির সদস্যসচিব দ্রাবিড় সৈকত বলেন, নজরুলের স্মৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে থাকা এ বটগাছটি বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ দীর্ঘমেয়াদি এবং সুপরিকল্পনার অভাব বলে আমি মনে করি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সোচ্চার ভূমিকা ও সুবিবেচনার পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় রমনার বটমূলের মতো হতে পারত এই কাজী নজরুল বটমূল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বটগাছটিকে অযত্ন–অবহেলার কোনো সুযোগ থাকবে না। কবির স্মৃতিবিজড়িত বটগাছটিকে যথাযথভাবে পূর্ণ মর্যাদায় আমরা সংরক্ষণ করব।’