করারোপের মাধ্যমে সিগারেটের দাম বাড়ানোর দাবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, প্রতিবছর সরকারের কাছে তামাক পণ্যের কর বাড়ানোর দাবি জানানো হলেও বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায় না।

আজ সোমবার তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টিটোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স—আত্মার যৌথ উদ্যোগে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যারা এ ঘোষণার অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
তামাক পণ্যের দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বেশি উপকার হবে বলে জানান জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি তামাকের রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহালের দাবি জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কর বৃদ্ধি করে সিগারেটের সহজলভ্যতা কমানো গেলে দরিদ্র মানুষ এই অর্থ পুষ্টিকর খাবারে ব্যয় করতে পারবে। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আশা করেন, এবারের বাজেট তামাক পণ্যের কর বৃদ্ধির অন্তত কিছু দাবি পূরণ করা হবে। এ ছাড়া পাঠ্যক্রম এবং সহশিক্ষা পাঠ্যক্রমে তামাকের কুফল অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন তিনি।

তামাক-কর বিষয়ে বাজেট প্রস্তাব বাস্তবায়নে তামাক পণ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে সরকারের অংশীদারত্ব এবং এনবিআর এ তামাক কোম্পানির প্রভাব বড় বাধা বলে জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমদ।
ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিলে প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার তামাক করবিষয়ক ‘বাজেট প্রস্তাব ২০২১-২২’ তুলে ধরেন। সেখানে বলা হয়, সব সিগারেট ব্র্যান্ডে অভিন্ন করভারসহ মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, সিগারেটের ব্র্যান্ডসমূহের মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনা, জর্দা ও গুলের ওপর সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার খুচরা মূল্যের ৬০ শতাংশ করা, সব তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।

বৈঠকে জানানো হয়, তামাক-কর ও মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবেন। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে ৩ লাখ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

পাশাপাশি সরকারের অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। প্রজ্ঞা জানায়, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করবে।

আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, টিভি টুডের এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার সৈয়দ মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর মাহফুজ কবীর, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন আত্মার কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়েরসহ তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা।