করোনাকালে মাদক কারবারে অভিনব কৌশল

মাদক মানে বিষ
প্রতীকী ছবি

করোনার কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও থেমে নেই মাদক কারবার। জরুরি পণ্য পরিবহনের ট্রাক, লাশবাহী গাড়ি, তেলের লরি, অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনব কৌশলে মাদক পরিবহন করা হচ্ছে।

পুলিশ, র‍্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারিতে মাদকসেবীদের চাহিদা যেন বেড়ে গেছে। তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে মাদক আনছেন কারবারিরা। ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, আফিম, গাঁজা, অ্যামফিটামিন, আইস ও ‘খাট’-এর পর এখন দেশে পাওয়া যাচ্ছে ভয়ংকর মাদক এলএসডি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও বলছেন, তাঁরাও মাদক কারবার বন্ধে কঠোর হচ্ছেন। তাঁদের তৎপরতার কারণেই মাদক ধরা পড়ছে।

আজ শনিবার দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। জাতিসংঘঘোষিত এবারের প্রতিপাদ্য, ‘মাদক বিষয়ে হই সচেতন, বাঁচাই প্রজন্ম, বাঁচাই জীবন’।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আগের বছরের তুলনায় করোনা সংক্রমণের বছর ২০২০ সালে সারা দেশে বেশি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। ওই বছর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র‍্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩১৭টি ইয়াবা বড়ি, ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৭৭ বোতল ফেনসিডিল, ৫০ হাজার ৭৮ কেজি গাঁজা, প্রায় ৭২ কেজি আফিম এবং প্রায় ৪ কেজি কোকেন উদ্ধার করে। এসব ঘটনায় হওয়া ৮৫ হাজার ৭১৮টি মামলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০১৯ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৩২৮টি ইয়াবা বড়ি, ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬৬৩ বোতল ফেনসিডিল, ৫০ হাজার ৭৮ কেজি গাঁজা, ৩২৩ কেজি হেরোইন, ১ কেজি আফিম ও ১ কেজি কোকেন উদ্ধার করে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসেই সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৭৯৫টি ইয়াবা বড়ি, ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭৭ বোতল ফেনসিডিল, ২৪ হাজার ৮৬৮ কেজি গাঁজা, ১২৯ কেজি হেরোইন, ৫৩ কেজি আফিম ও আধা কেজি কোকেন উদ্ধার করে। এসব ঘটনায় হওয়া ৩০ হাজার ৫৮৮টি মামলায় ৩৯ হাজার ৭৭৪ জনকে আসামি করা হয়।
সূত্রমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত থেকে গাঁজা এবং বেনাপোল সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল আসছে। আর মিয়ানমার থেকে টেকনাফ সীমান্ত হয়ে দেশে ইয়াবা ঢুকছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, করোনার মধ্যেও স্বাভাবিক সময়ের মতোই মাদক উদ্ধার ও মামলা হচ্ছে। আর লকডাউনের সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কারবারিরা ফাঁকফোকর দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়িতে লাশের পাশে মাদক নিয়ে আসছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠক করা হলেও সেখান থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢোকা বন্ধ হচ্ছে না।

উদ্ধার আর গ্রেপ্তার করেই মাদকের কারবার বন্ধ করা যাবে না। মাদকের ব্যবহার বন্ধে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে।
মোহা. শফিকুল ইসলাম, কমিশনার, ডিএমপি

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্র জানায়, করোনাকাল ২০২০ সালে রাজধানীতে ৩২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৪৯টি ইয়াবা বড়ি, ৭৭ হাজার ৮৩৩ বোতল ফেনসিডিল, ৪ হাজার ৬৮১ কেজি গাঁজা, ৫৭ কেজি হেরোইন, ৩ কেজি কোকেন ও ৩ কেজি আফিম উদ্ধার করে ডিএমপি। এর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ১৮ হাজার ৫৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগের বছর ২০১৯ সালে ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ২৭৪টি ইয়াবা বড়ি, ৬৮ হাজার ৩২৫ বোতল ফেনসিডিল, ৩ হাজার ৪৪৯ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ডিএমপি ২৫ হাজার ৮৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আগের বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া মাদকের চেয়ে চলতি বছরের এই সময়ে মাদক উদ্ধার বেশি হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে পাঁচ মাসে রাজধানীতে ১৯ লাখ ২৫ হাজার ৬৪৪টি ইয়াবা, ৩৫ হাজার ২০৯ বোতল ফেনসিডিল, ৩ হাজার ৭৪৪ কেজি গাঁজা, ৩৩ কেজি হেরোইন, ১০ কেজি আফিম ও ৩ কেজি কোকেন উদ্ধার করে ডিএমপি। গত বছরের এই পাঁচ মাসে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৭৫টি ইয়াবা, ২১ হাজার ৮২৫ বোতল ফেনসিডিল, ১ হাজার ৫৯ কেজি গাঁজা, ১৯ কেজি হেরোইন উদ্ধার করেছে ডিএমপি।

২০২০ সালে সারা দেশে বেশি মাদক উদ্ধার হয়েছে। ওই বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র‍্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩১৭টি ইয়াবা বড়ি, ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৭৭ বোতল ফেনসিডিল, ৫০ হাজার ৭৮ কেজি গাঁজা, প্রায় ৭২ কেজি আফিম এবং প্রায় ৪ কেজি কোকেন উদ্ধার করে। এসব ঘটনায় হওয়া ৮৫ হাজার ৭১৮টি মামলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বুধবার বিকেলে ডিবি রাজধানীর রায়েরবাগে অভিযান চালিয়ে একটি প্রাইভেট কার জব্দ করে। ওই গাড়ি থেকে গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে একটি পলিথিনে মোড়ানো ২০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে। এর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে জনি খান (২৫) ও হৃদয় শিকদার (২৪) নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন ডিবির আরেকটি দল খিলক্ষেতের শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে জ্বালানি তেল বহনকারী একটি লরির ট্যাংকের ভেতর থেকে ৩৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে।

অভিযান তদারকি কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টেকনাফের উখিয়া থেকে গাড়ির মালিক জাকির হোসেন গ্যাস সিলিন্ডারে ২০ হাজার ইয়াবার চালান নিয়ে গাজীপুরে যাচ্ছিলেন। মাদক কারবারের জন্য তিনি সম্প্রতি গাড়িটি কিনেছিলেন এবং ইয়াবা বহনের জন্য পেছনের ডালায় খালি গ্যাস সিলিন্ডারটি রাখেন। আর পাম্পের জন্য পেট্রল বহন করলেও এর আড়ালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত থেকে ঢাকায় গাঁজার চালান নিয়ে আসছিলেন।

গত ৮ মে ডিবি পুলিশের একটি দল মগবাজারসংলগ্ন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকের সামনে থেকে ২৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স জব্দ করে। ডিবির কর্মকর্তারা জানান, মুমূর্ষু রোগী বহনের বদলে মাদক বহন করছিলেন মাদক কারবারি ওই চালক।

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সময় ঘরবন্দী থাকার কারণে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে গেছে। মাদকসেবীদের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে মাদক ঢুকছে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। উদ্ধার আর গ্রেপ্তার করেই মাদকের কারবার বন্ধ করা যাবে না। মাদকের ব্যবহার বন্ধে পুলিশকে সবার সহযোগিতা করতে হবে।