করোনাকালে ৫২ শতাংশ মেয়েশিশু অনলাইনে নিপীড়নের শিকার

করোনাকালে অনলাইনে শিশু নির্যাতনবিষয়ক একটি জরিপের ফলাফল তুলে ধরতে জাতীয় প্রেসক্লাবে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সংবাদ সম্মেলন
ছবি: আহমেদ দীপ্ত

করোনাকালে ৩০ শতাংশ শিশু অনলাইনে নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নিপীড়নের শিকার হওয়া শিশুদের ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ মেয়েশিশু। ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছেলেশিশু।

করোনাকালে অনলাইনে শিশু নির্যাতনবিষয়ক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জরিপটি করেছে। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ শিশু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বলে ফলাফলে উঠে এসেছে। ৮৮ শতাংশ শিশু করোনাকালে অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

অনলাইনে শিশু নিপীড়নের ধরন সম্পর্কে বলা হয়, শিশুদের ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, অশালীন প্রস্তাব, সাইবার বুলিং, ব্ল্যাকমেইলিং, পর্নোগ্রাফি এবং কোনো না কোনোভাবে যৌনতাবিষয়ক ছবি ও তথ্য দেখতে পাওয়া।

১০৮ জন শিশুকে মুঠোফোনে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়। জরিপে এসেছে, ৫৪ শতাংশ শিশুর নিজস্ব ডিভাইস (মুঠোফোন, কম্পিউটার, ট্যাব) আছে। ১০০ শতাংশ শিশুই মেসেঞ্জার ব্যবহার করে। ৩৮ শতাংশ শিশু ইমো ও ১৬ শতাংশ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে।

অন্তত ৯৪ শতাংশ শিশু জানিয়েছে, করোনাকাল কোনো না কোনোভাবে তাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। অনলাইনে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার শিশুদের ৪১ শতাংশ পরবর্তীকালে তাদের অভিভাবক ও স্বজনদের বিষয়টি জানিয়েছে। তার মধ্যে ৬ শতাংশ শিশুর পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন আসকের শিশু অধিকার ইউনিটের সমন্বয়কারী ওম্বিকা রায়। তিনি বলেন, প্রযুক্তির বিস্তারের সঙ্গে অনলাইনে নারী ও শিশু হয়রানি এবং নির্যাতনের ব্যাপকতা দিনকে দিন বাড়ছে। করোনা মহামারিতে কন্যাশিশুসহ সব শিশুর অনলাইনে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে গেছে।

ওম্বিকা রায় বলেন, দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই আইনে অনলাইনে শিশুদের দ্বারা শিশু নির্যাতনের বিষয়টিকে চিহ্নিত করে আলাদা কোনো বিধান রাখা হয়নি। ফলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে।

ওম্বিকা রায় বলেন, বেশি বয়সী শিশুরা কম বয়সী শিশুদের চেয়ে অধিক মাত্রায় অনলাইনে নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তবে সার্বিকভাবে সব শিশুই ক্ষতিকর কনটেন্ট, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঝুঁকিতে রয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে আসকের শিশু অধিকার ইউনিট দেশের চারটি বিভাগের (ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম) পাঁচটি জেলায় এই জরিপ চালায়। জরিপে অংশ নেওয়া ১০৮ জনের মধ্যে ৬১ জন ছেলে, ৪৭ জন মেয়ে শিশু।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২০ সালে আসকের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ মেয়েশিশু অনলাইনে যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। করোনাকালে জরিপে দেখা যায়, এই হার প্রায় চারগুণ বেড়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আসকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নীনা গোস্বামী উপস্থিত ছিলেন।