করোনাকালেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনক: এমএসএফ

শিশু নির্যাতন
প্রতীকী ছবি

মহামারির এই সময়ও দেশে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে হত্যা, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ ঘটে চলেছে। যেটি আসলেই উদ্বেগজনক। এসবের পাশাপাশি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও সংকুচিত হয়েছে। বছরের প্রথম মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তৈরি করা মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব মূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

এমএসএফের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদন জানুয়ারি-২০২১’-এ বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা, দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বন্দুকযুদ্ধের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যের অপরাধের ঘটনা কমেছে। তবে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, ধর্ষণ, হত্যা ও পারিবারিক সহিংসতা, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা, সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন, সংখ্যালঘু নির্যাতন, সর্বোপরি নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে ঘটেই চলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার রক্ষায় করোনার এ সংকটকালীন সময়ে সাংবাদিকেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের হয়রানি ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এটি অগ্রহণযোগ্য এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত।

দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিরোধে জবাবদিহি অত্যাবশ্যক, তা না হলে এসব ঘটনা বাড়তেই থাকবে বলে মানবাধিকার প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের।

বন্দুকযুদ্ধ
প্রতীকী ছবি

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, সমকাল, আমাদের সময়, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক মানবজমিন, ঢাকা ট্রিবিউনসহ অন্যান্য জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ঘটনা স্থানীয় মানবাধিকার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিচারবহির্ভূত হত্যা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু

গত মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন একজন। বিজিবির সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কক্সবাজারের টেকনাফে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া বরিশালে রেজাউল নামের এক যুবক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছেন। গত বছর ২৯ ডিসেম্বর মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে তাঁকে আটক করা হয়েছিল, ২ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা

গত মাসে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২২৯টি। এর মধ্যে ধর্ষণ ও হত্যা ২টি, গণধর্ষণ ১১টি ও ধর্ষণের ঘটনা ৭২টি। ধর্ষণের শিকার ৭২ জনের মধ্যে ৪১ জন শিশু, কিশোরী ও প্রতিবন্ধী রয়েছে।

এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ১৩টি, যৌন হয়রানি ১৫টি ও শারীরিক নির্যাতনের ২৫টি ঘটনা ঘটেছে। অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন পাঁচজন নারী ও কিশোরী। গত মাসে ২১ জন নারী ও কিশোরী আত্মহত্যা করেছেন।

এসব ঘটনা ছাড়াও গত মাসে ৭৮ জন নারী ও শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। মৃত অবস্থায় ৫ জন নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি নিখোঁজ হওয়ার পর ৫ জন শিশুকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পারিবারিক বিরোধ, প্রতিশোধ, যৌতুক, তালাক, পরকীয়া ইত্যাদি কারণে হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লঙ্ঘন

মতপ্রকাশের অধিকারের ক্ষেত্রেও গত মাসের ঘটনাগুলো ছিল উদ্বেগজনক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছয়জন সাংবাদিক নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচন কেন্দ্র করে শেখ লেবু স্মৃতি সরকারি বিদ্যালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ছবি তুলতে গিয়ে এনটিভির ফটোসাংবাদিক মাসুদ রানাকে মারধর ও ক্যামেরা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

নির্বাচনকালীন সহিংসতা

গত মাসে বিভিন্ন জেলা–উপজেলায় পৌর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল নিতে প্রকাশ্যে গোলাগুলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ-সহিংসতা, প্রাণহানিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ গণমাধ্যমে দেখা গেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় দেশে ছয়জন নিহত ও শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে তিনজন, ঝিনাইদহে একজন, সিরাজগঞ্জে একজন ও বরিশালে একজন নিহত হন।

সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন

সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। নতুন বছরের প্রথম মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং দুজন নির্যাতিত হয়েছেন।

সংখ্যালঘু নির্যাতন

গত মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের পাঁচটি ঘটনা ঘটে।