করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান রাষ্ট্রপতির

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
ফাইল ছবি: বাসস

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কোরবানির মর্মার্থ অনুধাবন করে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে করোনার অমানিশার আঁধার কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

আজ বুধবার বঙ্গভবনে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ শেষে দেশবাসীর উদ্দেশে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি তিনি বিশ্বের সব মুসলিম ভাইবোনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। এই উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা। কোরবানি আমাদের মধ্যে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে। আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশীর সঙ্গে আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলিত হলেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি ও সৌহার্দ্য।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, মুসলিম বিশ্ব এমন একটা সময়ে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করছে, যখন করোনার ভয়াল থাবায় গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। বাংলাদেশেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব ক্রমান্বয়ে প্রকট হচ্ছে। করোনার কারণে দেশের জনগণের জীবন ও জীবিকা আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জীবন বাঁচানো প্রথম অগ্রাধিকার হলেও জীবন বাঁচিয়ে রাখতে জীবিকার গুরুত্বও অনস্বীকার্য। সরকার করোনা মোকাবিলা ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিভিন্ন প্যাকেজ প্রণোদনা প্রদানসহ বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। অসচ্ছল ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কৃষি, শিল্পসহ উৎপাদনশীল প্রতিটি খাতের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেও সরকার সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

আবদুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কারণে টিকাদান কর্মসূচি সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও বর্তমানে তা পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের সব নাগরিকের জন্য টিকাদান নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তাই এই কর্মসূচিকে সফল করতে সরকারের পাশাপাশি দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনা এমন একটি ভাইরাস, যা থেকে ইচ্ছা করলেই কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা এককভাবে একটি দেশের পক্ষে নিরাপদ থাকা সম্ভব নয়। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আজ আমরা গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা। তাই বিশ্বকে করোনার হাত থেকে বাঁচাতে হলে উন্নত-অনুন্নত, ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে বহুজাতিক সংস্থা-প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’

রাতের আঁধার শেষেই ঝলমলে রোদের আলোয় ভরে ওঠে পৃথিবী—এ মন্তব্য করে আবদুল হামিদ আশা ব্যক্ত করেন বলেন, করোনার অমানিশার আঁধারও কেটে যাবে। নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাবে দেশ। কিন্তু তার জন্য দরকার সবার যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। অর্থাৎ সঠিকভাবে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, সবাই সরকারনির্ধারিত স্থানে কোরবানি সম্পন্ন করবেন। যথাসময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সচেষ্ট থাকবেন।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা সবার জন্য বয়ে আনুক কল্যাণ, সবার মধ্যে জেগে উঠুক ত্যাগের আদর্শ। মহান আল্লাহ আমাদের মহামারি করোনার হাত থেকে রক্ষা করুন।’