করোনায় বাড়ির বাইরে একদিন

স্বামী-স্ত্রী খড়ের গাদা তৈরিতে ব্যস্ত। ছবি: লেখক
স্বামী-স্ত্রী খড়ের গাদা তৈরিতে ব্যস্ত। ছবি: লেখক

করোনা মহামারির কারণে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শহর থেকে গ্রাম, সবখানেই মোটামুটি একই চিত্র। বন্দিদশায় দিন কাটছে শিক্ষার্থীদের।

আমারও বাড়িতে বন্দী থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছিল না। চিন্তা করলাম নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে, মাস্ক, গ্লাভস পরে বাইরে বের হব।

একদিন বের হলাম দুপুরের খানিকটা পরে। রাস্তায় তেমন মানুষ নেই। আমি কিছুক্ষণ হেঁটেই আবিষ্কার করলাম মানুষ মোটেই সচেতন নয়। অনেকেই মাস্ক পরছে না। আমি দূর থেকে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করলাম তাঁরা কেন মাস্ক পরছেন না। একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির উত্তর, ‘মাস্ক পইরা কি অইবো বাপু, করোনা যার অয় ওর এমনেই অইব।’ আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু তার একটা কথাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নাকি কোনোভাবেই সীমিত রাখা সম্ভব নয়, তা যতই সেফটি মেজারমেন্ট মেনেই চলুক না কেন! আমি তাকে বোঝাতে একপ্রকার ব্যর্থ হয়েই আবার হাঁটতে শুরু করলাম। এবার আমি হেঁটে যাচ্ছি একটা মানুষে পরিপূর্ণ টি–স্টলের সামনে দিয়ে। এখানে বসে আছেন গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ব্যপারে এঁদের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই অথচ এঁদের অধিকাংশ পঞ্চাশোর্ধ্ব!

ভ্যাপসা গরমেও বাবা-মা খড়ের গাদা তৈরিতে ব্যস্ত। ছোট্ট শিশুটি গাছের ডালে বসে। ছবি: লেখক
ভ্যাপসা গরমেও বাবা-মা খড়ের গাদা তৈরিতে ব্যস্ত। ছোট্ট শিশুটি গাছের ডালে বসে। ছবি: লেখক

আমি নদীর দিকে হাঁটছি আর ভাবছি জীবন কত সহজ সাধারণ। অথচ আমরা শুধু অবিরাম ধেয়ে চলি।

হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল স্বামী-স্ত্রী খড়ের গাদা তৈরিতে ব্যস্ত। দুপুরের এই ভ্যাপসা গরমও তাঁদের কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তাঁদের গাদার পাশেই একটা গাছে মই লাগানো। তা দিয়ে উঠে তাঁদের ছোট ছেলেটি গাছের ডালে বসে আছে। এটাই বোধ হয় সুখী ছোট্ট পরিবারের নমুনা। কিছুদূর যেতেই দেখা হলো এক দুষ্টু–মিষ্টি ছেলের সঙ্গে। সে তার মাথায় করে কুড়িয়ে পাওয়া আম নিয়ে যাচ্ছে। তাকে একটা ছবি তুলব বলতেই ফিক করে হেসে দেয়।

সূর্য ডোবার অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যটা ভালোমতো ফ্রেমবন্দী হলো না। ছবি: লেখক
সূর্য ডোবার অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যটা ভালোমতো ফ্রেমবন্দী হলো না। ছবি: লেখক

নদীর পাড়ে আসতে না আসতেই একটা ছোট্ট নৌকা তীরে ভিড়ল। বাবা তাঁর ছেলেকে নিয়ে কোথায় যেন গিয়েছিলেন। ছেলেটা নামতে ভয় পেতেই বাবা তার হাত ধরে নামিয়ে দিলেন।

নৌকা মেরামতে ব্যস্ত জেলেরা। ছবি: লেখক
নৌকা মেরামতে ব্যস্ত জেলেরা। ছবি: লেখক

এরই মধ্যে জেলেপাড়া থেকে কানে ভেসে আসতে থাকে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ। আমি সেই শব্দকে অনুসরণ করে কিছুদূর যেতেই দেখি নৌকা মেরামতের কাজ চলছে। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, তাই আর দেরি না করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। কিন্তু সূর্য ডোবার অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যটা ভালোমতো ফ্রেমবন্দী না করে পারিনি। কেবলই মনে হতে থাকে, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি...।’

* শিক্ষার্থী: প্রথম বর্ষ, জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়