করোনায় মহাকাব্যিক প্রচেষ্টা ছিল কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের: আইজিপি

রোববার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে করোনাযোদ্ধারের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
ছবি : পুলিশ সদর দপ্তরের সৌজন্যে

করোনা সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসকসহ সবার যে প্রচেষ্টা তাকে ‘মহাকাব্যিক’ বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। রোববার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কোভিড-১৯ সম্মুখযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

বেনজীর আহমেদ বলেন, এ মহাকাব্যিক প্রচেষ্টায় সবাই যে দুর্দমনীয় সাহস দেখিয়েছেন, ঝুঁকি নিয়েছেন, পেশাগত মমত্ববোধ দেখিয়েছেন, তা এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। করোনাকালে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পেশাগত দক্ষতার স্বীকৃতি সারা দেশ দিয়েছে, দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের এই স্বীকৃতি ও পুরস্কার সরকার, পুলিশ ও দেশের মানুষের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি পুলিশকে আরও বেশি ভালো কাজে উজ্জীবিত করবে, উদ্দীপ্ত করবে ও অনুপ্রাণিত করবে।

আইজিপি বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের জন্যও করোনা ছিল একটি সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। করোনা মোকাবিলায় কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। শুরুতেই করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পুলিশের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের উপযোগী একটি গাইডলাইন তৈরি করে। এটি বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছিল, যেন অন্যান্য দেশ বাংলাদেশ পুলিশের অভিজ্ঞতা ও আয়োজন থেকে উপকৃত হতে পারে। এ ছাড়া তাঁদের সুরক্ষাসামগ্রীর সংকট ছিল। তারপরও নিশ্চিত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা মাঠে নেমেছেন। পরে পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী, মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল কত দ্রুত প্রস্তুতি নিয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে ৫০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। মাত্র তিন সপ্তাহে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এ হাসপাতালে প্লাজমা ব্যাংক স্থাপন ও প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে শুধু পুলিশ সদস্যই নন, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকেও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে বিশ্বমানের বিশেষায়িত হাসপাতালে রূপান্তর করতে চান তাঁরা। ভবিষ্যতে এ হাসপাতালে ক্যাথল্যাব স্থাপন এবং ক্যানসার চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হবে।

এর বাইরেও পুলিশপ্রধান ঢাকায় একটি বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি বিভাগীয় ও জেলা শহরে স্থাপিত পুলিশ হাসপাতালগুলো আধুনিকায়নের কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণকারী ‎র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, নৌপুলিশের উপমহাপরিদর্শক মো. আতিকুল ইসলাম চিকিৎসাকালীন তাঁদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হাসপাতালের পরিচালক হাসান-উল-হায়দার। স্বাগত বক্তব্য দেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও চিকিৎসক মনোয়ার হোসেন খান।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।