কলকাতায় মুজিব জন্মশতবর্ষ পালন

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত কলকাতার বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কলকাতা, ১৭ মার্চ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত কলকাতার বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কলকাতা, ১৭ মার্চ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতায় বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা বেজে এক মিনিটে। বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কর্মকর্তারা কেক কেটে ও আতশবাজি করে এ অনুষ্ঠানের সূচনা করে।

মঙ্গলবার সকালে উপহাইকমিশন ভবনে পতাকা উত্তোলনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিধায়কেরা। মমতা বলেন, এই অবিসংবাদিত নেতা মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমির জন্য লড়াই করে আজও জাতির অনু প্রেরণা হয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত কলকাতার বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এখানে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। বঙ্গবন্ধু কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় এই বেকার হোস্টেলের আবাসিক ছিলেন ১৯৪২-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। ছিলেন ২৪ নম্বর কক্ষে। এই ইসলামিয়া কলেজের বর্তমান পরিবর্তিত নাম মৌলানা আজাদ কলেজ। ১৯৪৫-৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কলকাতা উপহাইকমিশন তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও করোনার কারণে সেই অনুষ্ঠান একদিনে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। করোনার কারণে রবীন্দ্র সদনের পরিবর্তে মঙ্গলবার উপহাইকমিশন চত্বরে আয়োজন করা হয় এই জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানের। এত সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সভাপতিত্ব করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান।

মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কলকাতা দূতাবাসের দেয়ালে তৈরি করা হয় টেরাকোটা ম্যুরাল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কলকাতা দূতাবাসের দেয়ালে তৈরি করা হয় টেরাকোটা ম্যুরাল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভার পর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর আগে বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ব্যান্ড দল ‘জলের গান’ এর আসার কথা থাকলেও তারা করোনাভাইরাসের কারণে আসতে পারেনি। তবে উপস্থিত ছিল কলকাতার প্রখ্যাত শিল্পী অঞ্জন দত্তসহ আরও অনেকে।

বঙ্গবন্ধুর এই জন্মশতবর্ষের সূচনা দিনে জন্মশতবর্ষকে ঘিরে তৈরি একটি থিম সংয়েরও উদ্বোধন হয়েছে। থিম সংয়ের গানের কলি,‘আলোর পথের দিশারি তুমি যে, তুমি গণজাগরণ, আজও বাঙালির চেতনায় মিশে অগ্নিঝরা ভাষণ’। এই থিম সংয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন কলকাতার প্রখ্যাত শিল্পীরা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন অনুপম, রূপাঙ্কর, সৈকত মিত্র, আকাশ, ইমন, সোমলতা এবং জোজো। থিম সংটি লিখেছেন প্রিয় চট্টোপাধ্যায় আর সুর দিয়েছেন অশোক ভদ্র।

এদিন কলকাতা দূতাবাসের দেওয়ালে তৈরি একটি টেরাকোটা ম্যুরালেরও উদ্বোধন করা হয়। এই ম্যুরালে বাংলাদেশের বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে ৬ দফা, স্বাধীনতা আন্দোলন, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসকে তুলে ধরা হয়।