কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ

গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা সেতুর কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেটি এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি নির্মাণে এর আগে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু দাতাদেশ সৌদি আরব প্রকল্পটি অনুমোদন দিতে দেরি করে। এখন অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে গত ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ৩০ জুলাই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে এটি একনেকে পাস হবে।

সেতুটি নির্মিত হলে এর সুফল কী হবে, তা জানতে চাইলে তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. শরিয়ত উল্যা বলেন, ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা জেলা শহর অবস্থিত। এ কারণে গাইবান্ধা শহরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে না। তিস্তা সেতু নির্মিত হলে এটির দুপাশে সড়ক হবে। এ সড়ক হলে উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষ গাইবান্ধা শহরের ভেতর দিয়ে যাতায়াতের সুযোগ পাবে। এতে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমবে। গাইবান্ধায় ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হবে। তিনি আরও বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর এলাকায় তিস্তা সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করা হচ্ছে। সেতুটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন
পূরণ হবে।

এলজিইডির গাইবান্ধা জেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সীমানা দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে গেছে। এ নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৩৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ১০ কোটি ৬৩ লাখ ও নদীশাসনে ৮৭ কোটি ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। সেতুটি ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থ হবে। এটির স্প্যান হবে ৩১টি। সেতুটির উভয় পাশে ৮২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক করা হবে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম অংশে ছয় কিলোমিটার ও গাইবান্ধা অংশে ৭৬ কিলোমিটার পড়েছে। সড়কটির প্রস্থ হবে ২৪ ফুট। সড়কটি সুন্দরগঞ্জের সীচা, পাঁচপীর, ধর্মপুর ও সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর হয়ে সাদুল্যাপুরের ধাপেরহাট এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে মিলিত হবে। ঢাকায় প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে সেতুটি নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। চীনের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজের দায়িত্ব পায়। গাইবান্ধা এলজিইডির এসব কাজের তদারক করার কথা। এ বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সৌদি আরব থেকে অনুমোদন পেতে দেরি হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়।

জানতে চাইলে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম শেখ বলেন, সেতুটির কাজের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়। সেখানে অনুমোদিত হলে কাজের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এটি নির্মিত হলে ঢাকার দূরত্ব কমে যাবে। গাইবান্ধার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।