কানাডা ও নেদারল্যান্ডস পক্ষভুক্ত হতে চায়

২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়
রয়টার্স ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলায় কানাডা ও নেদারল্যান্ডস পক্ষভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বুধবার রাতে কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের গণহত্যা প্রতিরোধ এবং গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাম্বিয়ার করা মামলায় ইন্টারভেনর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য দেশ দুটি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) কাছে আবেদন জানাবে।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া ফিলিপ শ্যাম্পেন এবং ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফ ব্লক এই মামলাকে ‘সমগ্র মানবতার বিষয়’ উল্লেখ করে বলেন, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস মামলায় যেসব জটিল আইনি বিষয় উত্থাপিত হবে, সেগুলোতে সহযোগিতা করবে, বিশেষত ধর্ষণসহ যৌন অপরাধের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগী হবে। বিবৃতিতে তাঁরা গাম্বিয়ার আইনগত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, মিয়ানমারে যারা নৃশংসতা চালিয়েছে, তাদের দায়মুক্তির অবসান ঘটানোর এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।

আমাদের কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, আইসিজের মামলায় গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করতে কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এগিয়ে আসবে।

গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ অংশ নেবে কি না, জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ এখনই এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, আইসিজের মামলায় শুরু থেকেই গাম্বিয়াকে সামনে রেখে নেপথ্যে মূল কাজটা করছে বাংলাদেশ। আর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চুক্তি করে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে। তাই এখনই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংতার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে তেমন আগ্রহী নয়।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট একটি নিরাপত্তাচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে যে অভিযান চালায়, তাতে অন্তত ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ওই সামরিক অভিযানে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, রোহিঙ্গা নারীরা গণধর্ষণের শিকার হন এবং অনেকে নিহত হন। হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা ওই সামরিক অভিযান ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে’ পরিচালিত হয়েছিল বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হন। জাতিসংঘের তৎকালীন মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার একে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

গত বছরের ১১ নভেম্বর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়া আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলা করে। এই মামলায় শুনানি গ্রহণ করে আইসিজে গত ২৩ জানুয়ারি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় গণহত্যা সনদ লঙ্ঘন থেকে নিবৃত্ত রাখা এবং গণহত্যার অপরাধের সব সাক্ষ্যপ্রমাণ সংরক্ষণের জন্য মিয়ানমারের প্রতি এক অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করেন। এই আদেশ প্রতিপালনের বিষয়ে ছয় মাস পরপর আদালতের কাছে রিপোর্ট পেশ করার কথাও বলা হয়েছে।

আদালত অন্তর্বর্তী আদেশ জারির পর গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, সে বিষয়েও শুনানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং গাম্বিয়াকে তার পূর্ণাঙ্গ আরজি পেশ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।

গাম্বিয়াকে ওআইসি এই মামলায় সহায়তা করছে। তবে কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাঁদের বিবৃতিতে অন্যান্য দেশকেও এ মামলায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের এই মামলায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল সেন্টার ফর জাস্টিস। রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকের প্রেসিডেন্ট তুন খিন এই মামলায় যুক্ত হওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।