কারাবন্দী সন্তানের পরীক্ষার সুযোগ চেয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি

দুপুরে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কারাবন্দী তিন নেতার অভিভাবকেরা
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্র অধিকার পরিষদের কারাবন্দী তিন নেতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁদের অভিভাবকেরা। উপাচার্য তাঁদের বলেছেন, আদালত অনুমতি দিলে বিশ্ববিদ্যালয় তিন ছাত্রের পরীক্ষা নেবে।

কারাবন্দী তিন ছাত্র হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র ও ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, আইন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র ও পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন।

আগামী জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ-ইনস্টিটিউটে চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। দুপুরে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই তিন নেতার অভিভাবকেরা। তাঁরা বলেন, পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না পেলে ওই তিন ছাত্রনেতার শিক্ষাজীবনের এক বছর হারিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর এই সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছিল ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের সংগঠন ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদসহ সমমনারা। পরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা মোদির সফরবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে একপর্যায়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। টানা তিন দিন পুলিশের সঙ্গে হেফাজত নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

এরপর নুরুল হকের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দেশজুড়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাঁদের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়। ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লা গত ৪ এপ্রিল, আখতার হোসেন ১৩ এপ্রিল ও আকরাম হোসেন গত ২৯ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন।

আকরাম হোসেনের বাবা হাফেজ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যের কাছে আমাদের অনুরোধ, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য দয়ামায়া দিয়ে আপনি আমাদের সন্তানদের সহযোগিতা করুন। তাঁরা অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছে, কোনো অপরাধ করেনি। নিজের সন্তান মনে করে আপনি তাঁদের সহযোগিতা করুন।’ বক্তব্য দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন এই বাবা।

বিন ইয়ামিন মোল্লার বাবা রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা প্রতিটি ছাত্রই মেধাবী। এই মেধাবীর জীবন যদি পঙ্গু হয়ে যায়, দেশ ও জাতির ক্ষতি হবে। দেশের স্বার্থে আমাদের সন্তানদের মুক্তি দেওয়া হোক। আমাদের সন্তানেরা অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছে, কোনো চুরি-ডাকাতি করেনি। কেন অন্যায়ভাবে সরকার তাদের আটকে রাখবে? প্রত্যেক ছাত্রের রাজনীতি করার অধিকার আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যের কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনি আপনার এই সন্তানদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিন। তাঁরা কোনো ভুল করে থাকলে ছাত্র হিসেবে তাদের ক্ষমা করে দিন। জীবন গড়ার দায়িত্ববোধকে এগিয়ে দিয়ে জেলখানায় হলেও তাদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। শিগগিরই আমরা সন্তানদের জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করব। এতে আমাদের আপনি সহযোগিতা করুন।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কারাবন্দী বিন ইয়ামিন মোল্লার মা হাসিনা বেগম বক্তব্য দেন।