কারিগরি শিক্ষার ওপর আরও জোর দিতে হবে

কারিগরি শিক্ষা নিলে তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। কমবে বেকারত্ব। আর এতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরও সহজ হবে।

করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে শ্রমবাজারে এসেছে পরিবর্তন। এ সময় নতুন কাজ যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি অনেক গতানুগতিক শ্রম খাতের চাকরি বন্ধ হয়েছে।

তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কারিগরি ও দক্ষতাভিত্তিক (টিভেট) শিক্ষার ওপর আরও জোর দেওয়ার  সময় এসেছে। এ জন্য এই খাতে প্রণোদনাসহ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের যৌথ সমন্বয় দরকার।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ওয়েবিনার আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘নিউ চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস ইন দ্য স্কিল ইকোনমি অব বাংলাদেশ টু অ্যাচিভ দ্য এসডিজিস অ্যান্ড ভিশন ২০৪১’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার আলোচনার আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউসেপ বাংলাদেশ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে অনেক সময় নিম্নমানের বলে দেখা হয়। এটি ঠিক নয়। বরং এটিই মূলধারা হওয়া উচিত ছিল। শ্রমবাজারে যেসব কাজের চাহিদা আছে, সেসব বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিতে সবাইকে আরও মনোযোগী হতে হবে। তিনি বলেন, ভোকেশনাল ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের কর্মমুখী করা গেলেই সমাজে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরও সহজ হবে।

আলোচনায় ইউসেপ বাংলাদেশের চেয়ারপারসন পারভীন মাহমুদ,এফসিএ বলেন, করোনার কারণে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। যুবকদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে কারিগরি খাত। এ খাতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের সহায়তা দরকার।

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, অনলাইনে কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি সম্ভব না হলেও প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়িয়ে তা দূর করা সম্ভব। প্রশিক্ষণের তাত্ত্বিক অংশ অনলাইনে সম্ভব হচ্ছে। আর ব্যবহারিক অংশ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শেখানো সম্ভব।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ জামান খান কবির বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে তরুণেরা কী পরিমাণ বেকার, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। এটি হলে এসব তরুণকে ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে, তা নির্ধারণ ও প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম হালনাগাদ করা যেত।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এপ্রিল ও মে মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস চলছে। পলিটেকনিকের ক্ষেত্রে ক্লাসগুলো সংসদ টিভির মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ করিম বলেন, দক্ষতার অভাবে অনেকেই বেকার। করোনার সময় কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

ইনফরমাল সেক্টর ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মির্জা নূরুল গণি বলেন, করোনার কারণে এ বছর কারিগরি শিক্ষা খাতে বিকাশ একটু ধীরগতি পেয়েছে। তিনি বলেন, শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, প্রশিক্ষণার্থীদের শ্রমবাজারের সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেওয়া জরুরি।

আলোচনায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার তানজিলুত তাসনুবা কোভিড পরবর্তী সময়ে এসডিজি অর্জনের জন্য টিভেট শিক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে ঢেলে সাজাতে হবে সে বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে আলোচনার শেষ ধাপে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র অপারেশন অফিসার মোখলেসুর রহমান বিশেষজ্ঞ বক্তব্য দেন। তিনি কারিগরি শিক্ষা নিয়ে নানা আঙ্গিকে আলোচনা করেন এবং টিভেট নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন। এরপরই ওয়েবিনারে অংশ নেওয়া অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সম্মানিত প্যানেলিস্টবৃন্দ। সবশেষে, ইউসেপ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কারিগরি ও দক্ষতাভিত্তিক (টিভেট) শিক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চলমান এবং নিকট ভবিষ্যতের কার্যক্রম সম্পর্কে অতিথিদের অবহিত করেন এবং সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে ওয়েবিনারের শেষ করেন।