কার্টুনিস্ট কিশোরকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এই আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন কার্টুনিস্ট কিশোরের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, ২৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলার আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। আজ রোববার সেই আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য ছিল। ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলার অপর আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ কারাবন্দী অবস্থায় মারা যান। অপর আসামি আহমেদ কবির কিশোরকে আজ আদালতে হাজির করা হয়নি।

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আদালতকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আহমেদ কবির কিশোরকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। অথচ এখন আবার নতুন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। এটা আইনের পরিপন্থী। আসামিকে আদালতেও হাজির করা হয়নি। মামলার অপর আসামি মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা গেছেন। এই রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন বাতিল করা হোক। এ সময় আদালত রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জানতে চান, কেন আসামিকে আজ আদালতে হাজির করা হয়নি? তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর কোনো জবাব আদালতের কাছে দেওয়া হয়নি। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আহমেদ কবির কিশোরকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে দেন।

কার্টুনিস্ট কিশোরের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, রমনা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করার পর আহমেদ কবির কিশোরকে র‍্যাব হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছিল, যা ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন অপরাধ। সিএমএম আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে, আহমেদ কবির কিশোরকে যেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। আহমেদ কবির কিশোর আদালতের কাছে অভিযোগ জানাতে চান। ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩) রাতে মারা যান। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন।

গত বছরের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তাঁরাসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র‍্যাব। সেই মামলায় দুজন জামিনে মুক্তি পেলেও মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন ছয়বার নাকচ হয়।

কারাগারে থাকা কার্টুনিস্ট কিশোরও অসুস্থ বলে জানালেন তাঁর ভাই আহসান কবির। তিনিও প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি কিশোর ও মুশতাকদের ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়েছিল। কিশোরকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখেন। তাঁকে কিশোর বলেছেন, গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করা হয়েছে, যার কারণে তাঁর পায়ে সংক্রমণ হয়েছে। কানে পুঁজ হচ্ছে। তাঁর ডায়াবেটিস অনেক বেড়ে গেছে। চোখেও কম দেখছেন। তাঁর দ্রুত চিকিৎসা দরকার।

১০ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ, রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।

সম্প্রতি এই মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। বাকি আটজনকে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়নি। অবশ্য পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে না নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এই মামলা অধিকতর তদন্ত চেয়ে আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ মামলায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানসহ আটজনকে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়নি। অপর সাতজন আসামি হলেন ‘নেত্র নিউজ’-এর তাসনীম খলিল, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, জুলকারনাইন সায়ের খান, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার।

তাঁদের বিরুদ্ধে যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জাতির জনক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়। মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, তাঁরা রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধ করেছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মুশতাক আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ‘আই অ্যাম বাংলাদেশি’ (ইংরেজি হরফে লেখা) নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির’ অভিযোগ আনা হয়। এজাহারে র‍্যাব দাবি করে, মুশতাক আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদে দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নানের সম্পৃক্ততা পায় তারা।

‘আই অ্যাম বাংলাদেশি’ পেজটি চালানোর দায়ে যে ছয়জনকে আসামি করা হয়, তাঁরা হলেন সায়ের জুলকারনাইন, আহমেদ কবির কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ ও মুশতাক আহমেদ। হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত কথোপকথনের জেরে আসামি হন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনীম খলিল ও সাহেদ আলম, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নান।