কাল থেকে গণপরিবহন বন্ধ: কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

আগামীকাল সোমবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ রোববার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ কথা জানান। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, গণপরিবহন আগামীকাল থেকে বন্ধ থাকবে।

তবে পণ্য পরিবহন, জরুরি সেবা, জ্বালানি-ওষুধ-পচনশীল-ত্রাণবাহী পরিবহন, সংবাদপত্র, গার্মেন্টসসামগ্রী এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সারা দেশ লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামীকাল থেকে আপাতত সাত দিনের জন্য লকডাউন (অবরুদ্ধ অবস্থা) শুরু হবে।

দেশে লকডাউন দেওয়া হবে কি না, এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই মানুষের মধ্যে আলোচনা চলছিল। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার দুপুরের আগে অনেকটা আকস্মিকভাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক ভিডিও বার্তায় বলেন, করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। বিরাজমান পরিস্থিতিতে সরকার সোমবার থেকে এক সপ্তাহ সারা বাংলাদেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সরকার গঠিত কোভিড-১৯–বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সামাজিক অনুষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ করাসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ করেছিল। আর সংক্রমণ মোকাবিলায় গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে অর্ধেক জনবল দিয়ে অফিস পরিচালনা করা, জনসমাগম সীমিত করা, গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করা ইত্যাদি। এসব নির্দেশনা ঠিকমতো কার্যকরে যাওয়ার আগেই লকডাউনের পথে গেল সরকার।

আগামীকাল সোমবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান ওবায়দুল কাদের। দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণের এই অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘আগামীকাল থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, জরুরি সেবা, জ্বালানি-ওষুধ-পচনশীল-ত্রাণবাহী পরিবহন, সংবাদপত্র, গার্মেন্টস সামগ্রী এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।’

জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি ও শতভাগ মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও কঠোর হতে হবে।

করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় আর কোনোভাবেই উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তাই হাটবাজার, ফেরি, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ডসহ অন্যান্য জায়গায় গেলে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে।

আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া লকডাউন কার্যকর করার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘জীবনের থেকে জীবিকা কোনোভাবেই বড় নয়। আগে নিজে বাঁচুন ও পরিবারকে বাঁচতে সহযোগিতা করুন।’

ভাসমান–অসহায় মানুষকে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটাই এখন আওয়ামী লীগের একমাত্র রাজনীতি।’

সারা দেশে সীমিত আকারে ঘরোয়াভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সামান্য উদাসীনতা দেশকে মৃত্যুর উপত্যকায় নিয়ে যাবে। তাই নিজের জন্য হলেও শতভাগ মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

পবিত্র রমজান সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্যোগে জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না।

ধানমন্ডিতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সামছুন্নাহার চাঁপা, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।