বুধবার থেকে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচার চলবে ভার্চ্যুয়ালি

সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল ছবি

করোনার সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাল বুধবার থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হতে যাচ্ছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদেশক্রমে আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানা গেছে।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অপর পাঁচ বিচারপতি। বিচারপতিদের আসন গ্রহণের পর এক মামলার বিষয়ে আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

তখন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘চারদিকে যে অবস্থা (করোনা সংক্রমণ) দেখছি, ইতিমধ্যে আমাদের ১৩ জন বিচারপতি ও নিম্ন আদালতের ৩৬ জন বিচারক আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক স্টাফও আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা হয়তো আবার ভার্চ্যুয়াল কোর্টে ফিরে যাব। ভার্চ্যুয়াল কোর্টে যে মামলা নিষ্পত্তি কম হয়, তা নয়। আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি ভাবছি।’

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ জানান, অ্যাটর্নি জেনারেল, একজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও কয়েকজন আইন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মানুষের জীবন আগে। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

উভয় বিভাগে আবার ভার্চুয়ালি বিচার

এরপর বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে পৃথক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯ জানুয়ারি (বুধবার) হতে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন-২০২০’ এবং এ–সংক্রান্ত জারি করা প্র্যাকটিস ডিরেকশন (ব্যবহারিক নির্দেশনা) অনুসরণ করে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত অপর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে করোনা সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯ জানুয়ারি হতে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন-২০২০’ এবং এ–সংক্রান্ত জারি করা প্র্যাকটিস ডিরেকশন (ব্যবহারিক নির্দেশনা) অনুসরণ করে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সব বেঞ্চে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

ভার্চ্যুয়াল আদালতের পূর্বাপর

করোনার প্রাদুর্ভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের মার্চে সরকার ঘোষিত ‘সাধারণ ছুটির’ সঙ্গে মিল রেখে দেশের সব আদালতে সাধারণ ছুটি চলে। পরে ওই বছরের ৯ মে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ওই বছরের ১১ মে থেকে ভার্চ্যুয়াল আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। আর অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত হয়। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় এরপর কখনো ভার্চ্যুয়ালি ও ক্ষেত্রবিশেষে শারীরিক উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম চলে।

এরপর গত বছরের ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে শারীরিক উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর পর থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ চলছিল।

এ অবস্থায় ১২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৬ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহের প্রতি রোব, সোম, মঙ্গল ও বুধবার আড়াইটায় শুধু তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আপিল বিভাগের মামলাসংক্রান্ত জরুরি বিষয়াদির শুনানি গ্রহণ করবেন।

এরপর ১৬ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহে চার দিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ভার্চ্যুয়ালি বিচার কার্যক্রম চলছে। এ অবস্থায় আজ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে কাল থেকে ভার্চ্যুয়ালি বিচার কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত এল।