কীভাবে সফল অনলাইন মিটিং করবেন

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি চলছে। করোনাভাইরাস আক্রমণের কারণে আমাদের জীবনযাপনেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। করোনা সংক্রমণ রোধে বেশির ভাগ দেশে লকডাউন চালু করা হয়েছে। এ কারণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। জীবিকার তাগিদে ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনলাইনে অফিস করছেন অনেকেই। অনলাইনে অফিস করতে আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কেননা আমরা অনলাইন মিটিংয়ে অভ্যস্ত নই মোটেও। বিড়ম্বনার একটি কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আজ অনলাইন মিটিংয়ের আদবকেতা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব।

সফল অনলাইন মিটিংয়ের জন্য কী কী করতে হবে বা কী কী করলে সফল অনলাইন মিটিং করা যাবে এবং কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে, তা তুলে ধরা হলো—

সঠিক সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

অনলাইন মিটিং সম্পন্ন করার জন্য বর্তমান বিশ্বে নানা ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। কোনটি আসলে আপনার প্রয়োজন, সেটি নিজেই বাছাই করতে হবে। তা ছাড়া কী কী ফিচার আপনার দরকার, সেটিও আপনিই জানবেন। সুতরাং একটি অনলাইন মিটিং শুরু করার আগে সঠিক সফটওয়্যার নির্বাচন খুবই জরুরি। আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু অনলাইন কনফারেন্সিং সফটওয়্যারের নাম এবং কাজের ধরন সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—

জুম

জুম একটি সহজলভ্য সফটওয়্যার, যা আপনি ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি একসঙ্গে ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী এবং হাজারো দর্শক নিয়ে মিটিং সম্পন্ন করার সক্ষমতা রাখে। এই ফিচারটিই মূলত এই সফটওয়্যারটিকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সফটওয়্যারে পরিণত করেছে। অনলাইন ক্লাস করার জন্য এটি একটি উপযুক্ত সফটওয়্যার।

গুগল মিট

এই সফটওয়্যারটি মূলত গুগল হ্যাংআউটের প্রফেশনাল ভার্সন, যার সঙ্গে রয়েছে জি-সুইট। এটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২৫০ জন অংশগ্রহণকারী নিয়ে মিটিং সম্পন্ন করা সম্ভব। এ ছাড়া এটিতে স্বয়ংক্রিয় ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

মাইক্রোসফট টিমস

এটিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই টেকসই কিন্তু সফটওয়্যারটি বেশ ব্যয়বহুল। তা ছাড়া এটিতে প্রায় সব ধরনের ফিচার রয়েছে যেগুলো আমাদের দরকার।

ওয়েবএক্স

এই সফটওয়্যারটি একদম ফ্রি। এতে ১০০ জন অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি নিয়ে মিটিং করা সম্ভব। ওয়েবএক্সের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং, ওয়েবইনার, কল দেওয়া ও স্ক্রিন শেয়ারিং—এগুলো সবই করা সম্ভব।

ডিসকর্ড

এটিতে ৫০ জন লোক একসঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারবে একটি অনলাইন মিটিংয়ে।

নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করে নিন

মিটিং যতই ছোট হোক না কেন, শুরুর করার পূর্বে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম তৈরি করে নিন। যাতে কেউ মিটিং চলাকালীন অপেশাদারত্বের পরিচয় না দেয়। খুব সাধারণ কিছু নিয়ম যেমন মোবাইল নীরব করে রাখা, মিটিং চলাকালীন অযাচিত কথা না বলা, আপনার পাশে যাতে সবকিছু নীরব থাকে সে ব্যবস্থা করা এবং মিটিং চলাকালীন অন্য কোনো কাজ না করা ইত্যাদি নিয়মগুলো সবারই মেনে চলা উচিত। এ ছাড়া উচ্চ শব্দ যুক্ত স্থানে বসে কখনো অনলাইন মিটিংয়ে অংশ্রগ্রহণ করবেন না। সবার জন্য ন্যূনতম একটি কম্পিউটার বা স্মার্টফোন, মাইক্রোফোন, ওয়েবক্যাম ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করুন।

আলোচ্যসূচি তৈরি করুন

একটি মিটিংয়ে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, সেগুলো নোট করে ফেলুন। ক্রমানুসারে লিখে ফেলুন, যাতে আলোচনার সময় কোনো ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। বিষয়গুলোর পাস সময়ও লিখে ফেলুন। ফলে সময়ের দিকে খেয়াল থাকবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কটি বিষয় কভার করতে পারবেন।

সবাইকে মিটিংয়ের আগে অবহিত করুন

করোনকালীন প্রায় সবাই যেহেতু বাড়িতে অবস্থান করছে, তাই পরিবারের সঙ্গে ব্যস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। এ জন্য মিটিংয়ের পূর্বে সবার সুবিধা–অসুবিধা এবং সময় জেনে এরপর মিটিংয়ের সময় এবং তারিখ ঠিক করা উচিত। যাতে মোটামুটিভাবে সবাই অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। এ ক্ষেত্রে সঠিক যোগাযোগ দক্ষতা আপনার কাজকে আরও সহজ করে দিতে পারে। আর হ্যাঁ সবার অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়—এই ব্রত নিয়ে মিটিং আহ্বান করুন। এই কাজের জন্য World Time Buddy ও World Clock Meeting Planner ব্যবহার করতে পারেন।

সবাইকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন

আপনার টিম মেম্বারদের সবাইকে মিটিংয়ে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন, যাতে করে মিটিংটি ফলপ্রসূ হয়। প্রত্যেকের পরিচয় এবং কাজ সম্পর্কে তাদের মতামত শুনুন। তাদের প্রশ্ন করার বা কথা বলার সুযোগ দিন।

সবাইকে মিটিংয়ের সারসংক্ষেপ দিন

মিটিং শেষ হলে আবার কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, তা সংক্ষেপে তুলে ধরুন; যাতে সহজে সবার মনে থাকে। প্রয়োজন আলোচনার বিষয়বস্তু, কাজের বিবরণ ও কাজ জমা দেওয়ার তারিখ উল্লেখ করে সবাইকে ই–মেইল করে দিন।

*শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। [email protected]