কুমিল্লার ইকবালকে নিয়ে যে যা বলছেন...

দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘির উত্তর পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে ইকবাল হোসেন (৩৫) পবিত্র কোরআন রেখেছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তিনি নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগরসংলগ্ন দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা।

ইকবালের পরিবারের দাবি, তিনি কখনো বাসচালকের সহকারী, কখনো রংমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছেন। বিয়ে করেছেন দুটি। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ বছর আগে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। সেই সংসারে তাঁর এক ছেলে আছে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে গেছেন। এ সংসারে তাঁর একটি মেয়ে আছে। গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ইকবালের বাবা নুর আহমেদ আলম, মামা তাজুল ইসলাম ও ভাই সাফায়েত হোসেনকে পুলিশ নিয়ে গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর, বকশীনগর, তেলিকোনা, পাথরিয়াপাড়া সাহাপাড়া ও দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপাড়া এলাকায় ঘুরে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ইকবাল হোসেনের মূল বাড়ি ছিল তেলিকোনা এলাকায়। ওই এলাকার ভিটাবাড়ি বিক্রি করে তাঁরা ভাড়া থাকেন দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুরপাড় এলাকায়। নুর আহমেদ আলম ও বিবি আমেনা বেগমের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ইকবাল হোসেন সবার বড়। তিনি মাদকাসক্ত। মাদকের টাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের যন্ত্রণা করতেন তিনি।

ইকবালের মা বিবি আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী টুকটাক ছোট ব্যবসা করেন। কাউন্সিলর মো. সোহেল আমার স্বামীকে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেন। কিছুদিন আগেও চার হাজার টাকা দিয়েছেন ব্যবসা করার জন্য। আমার ছেলে ইকবালকে ভাগিনা বলে মায়া করেন। ইকবালের মাথায় গন্ডগোল আছে। ১০ বছর আগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় বিয়ে করে সে। বিয়ের পাঁচ বছর পর বউয়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় আবার বিয়ে করে। ইকবালের খারাপ স্বভারের কারণে বউ ছেড়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে যারে দেখা গেছে, সেটা আমার ছেলের ছবি। ১১ অক্টোবর সন্ধ্যার পর আমার সঙ্গে তার দেখা হয়নি। ইকবাল মদিনা বাসের হেলপার (চালকের সহকারী) ছিল। রংয়ের কাজ করত। নেশাখোর।’
ইকবালের নানি বিবি রহিমা বলেন, ‘১১ অক্টোবর আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে ইকবাল। এরপর আর তার সঙ্গে দেখা হয়নি। কোরআন শরিফ রাখার দায়ে নাতির বিচার হওয়া উচিত।’

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তে ইকবালকে শনাক্ত করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ইকবালের বিষয়ে জানতে চাইলে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সোহেল বলেন, ‘ইকবালকে আমি চিনি। তাঁর পুরো পরিবার আমার পরিচিত। আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাঁরা। ইকবাল ভবঘুরে নয়। তাঁর মাথার এক-দুইটা তার ছেঁড়া।’

১৩ অক্টোবর পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে কুমিল্লা নগরের কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর জেরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি মামলা হয়।