কুমিল্লায় গোমতী নদীর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

কুমিল্লার আদর্শ সদর ও বুড়িচং উপজেলায় অবৈধভাবে গোমতী নদীর মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে একটি চক্র এ নদীর মাটি ব্যবসায় সক্রিয় হয়। চক্রটি বিভিন্ন ইটভাটায় এ মাটি সরবরাহ করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর এক পাড়ের ৩২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং অন্য তীরের ৩১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার এলাকায় মাটি কাটা হচ্ছে। শতাধিক ট্রাক্টরে করে এসব মাটি বিভিন্ন ইটভাটা ও বসতবাড়িতে নেওয়া হচ্ছে। সদর উপজেলার কটকবাজার থেকে বুড়িচং উপজেলার কংশনগর পর্যন্ত নদীর দুই তীরে মাটি কাটা হচ্ছে। নগরের টিক্কারচর, কাপ্তানবাজার, ভাটপাড়া, বদরপুর, পালপাড়া, বানাসুয়া, আড়াইওড়া, আমতলী, বুড়িচং উপজেলার গোবিন্দপুর ও কংশনগর এলাকায় চলছে মাটি কাটার কাজ। মাটি আনা-নেওয়ার কারণে গোমতী নদী রক্ষাবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে আদর্শ সদর উপজেলার ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ির সামনে মাটি কাটার কারণে গাছগাছালি উপড়ে ফেলা হয়েছে। টিক্কারচর, চান্দপুর, ভাটপাড়া, আড়াইওড়া ও আমতলীতেও গাছপালা ধ্বংস করে মাটি কাটা হচ্ছে।
নদীর পারের কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, দিন-রাত মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। তা বন্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
আড়াইওড়া এলাকার মো. সবুজ নামের এক যুবক বলেন, প্রতি ট্রাক্টর মাটির দাম ১০০ থেকে ২৫০ টাকা। শ্রমিক খরচ ও ট্রাক্টরভাড়া আলাদা।
পালপাড়া এলাকার ট্রাক্টরচালক আলাউদ্দিন বলেন, ‘গোমতী নদীর শিমাইলখাড়া এলাকা থেকে মাটি নিচ্ছি। আমার এখানে প্রতি ট্রাক্টর মাটির দাম ২৫০ টাকা। প্রতিদিন একটি ট্রাক্টর ১০ থেকে ১২ বার মাটি নেয়। মাটি বুড়িচং, আদর্শ সদর, মুরাদনগর ও দেবীদ্বারের ইটভাটায় যায়।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লা জেলার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গোমতী কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী নদী। একসময় খরস্রোতা ছিল, এখন বিপন্ন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি চক্র এ নদীর গতিপথসহ সবকিছু ধ্বংস করছে। প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ (পওর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ বি এম খান মুজাহিদী বলেন, ‘লোকবলের অভাবে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। আমার দপ্তরে তিনজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর তিনটি পদই শূন্য। একজন সহকারী প্রকৌশলীকে দিয়ে নদীর রক্ষণাবেক্ষণ করছি। এরপরও যখনই অভিযোগ পাই, চেষ্টা করি কিছু করতে। ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলা হয়েছে। একবার ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিয়েছেন।’
জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘দিনের চেয়ে রাতেই বেশি গোমতী নদীর মাটি কাটা হয়। আমরা হাকিম-সংকটের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারছি না। জনগণকে সচেতন হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’