চকরিয়ায় ছয় ভাইয়ের মৃত্যু
কুয়াশার মধ্যেও বেপরোয়া গাড়ি চালান চালক
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান বিআরটিএর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক শফিকুজ্জামান ভূঞা।
কমিটি ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়।
কক্সবাজারের মালুমঘাটে এক পরিবারের আট ভাইবোনকে চাপা দেওয়া পিকআপচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। কুয়াশার মধ্যে সড়কের বাঁকেও বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন চালক সাইফুল ইসলাম। চাপা দিয়ে সামনে চলে যাওয়ার পর আবার পেছনের দিকে গাড়িটি আসারও প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে পেছনে আসার কারণটি পরিকল্পিত কি না, তা পুলিশি তদন্তের ওপর নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিএ) উদ্যোগে করা তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে এ বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করেছে। কমিটি কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে ১০টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার (তিন চাকার যান) চলাচল বন্ধ করা এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁকগুলো সোজা করার পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ওপর জোর দিয়েছে।
৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট হাসিনাপাড়ায় একই পরিবারের সাত ভাই ও এক বোনকে চাপা দেয় পিকআপটি। ১০ দিন আগে মারা যান তাঁদের বাবা সুরেন্দ্র সুশীল। শ্মশানে ধর্মীয় আচার শেষে বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। এ ঘটনায় ছয় ভাই মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বোন।
বিআরটিএর উদ্যোগে করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
এ ঘটনায় বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং হাইওয়ে পুলিশের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় বিআরটিএর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক শফিকুজ্জামান ভূঞাকে। কমিটি ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ পৃষ্ঠার এ তদন্ত প্রতিবেদন বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়।
জানতে চাইলে কমিটির প্রধান শফিকুজ্জামান ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেপরোয়া গতি ও কুয়াশার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়া চালকের লাইসেন্স ও পিকআপটির ফিটনেস ছিল না। দুর্ঘটনা রোধে বাঁক সোজা করা, ক্যামেরা বসানোসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছি আমরা। আরও যেসব সুপারিশ রয়েছে, তার মধ্যে চালকের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স নিশ্চিত করা, সড়কের পাশে তিন চাকার যান চলাচলের জন্য পৃথক জায়গা রাখা ও গতি পর্যবেক্ষণ উল্লেখযোগ্য।’
পিকআপচালক সাইফুল ইসলাম প্রথমে ধাক্কা দেওয়ার পর পুনরায় পেছনে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে কমিটি। এ বিষয়ে কমিটির সদস্য সওজের চকরিয়ার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রথমে পথচারীদের ধাক্কা দিয়ে গাড়িটি বন বিভাগের সাইনবোর্ডের সঙ্গে লেগে যায়। এরপর সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য পেছনে আসে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে।
সওজের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার বাঁকখালী সেতু থেকে ‘স্বাগতম কক্সবাজার পৌরসভা’ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। দুই লেনের মহাসড়কের এ অংশে ২২টি দুর্ঘটনাপ্রবণ বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
হাইওয়ে পুলিশের হিসাবে, ২০২১ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটারে প্রায় ৫০টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন মারা গেছেন। তবে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের হিসাবে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ৫২, আহত প্রায় ৫০০।
সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘১৪টি বাঁক প্রশস্তকরণের জন্য ইতিমধ্যে আমরা চিঠি দিয়েছি। এটা করা গেলে দুর্ঘটনা কমার পাশাপাশি যানজটও কমবে।’