কুয়েত আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগের তথ্য জানালে সাংসদ পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ছবি: বাসস
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ছবি: বাসস

কুয়েতে আটকের ১৩ দিন পরও সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল সম্পর্কে দেশটির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ। তবে কুয়েতের গণমাধ্যম থেকে সরকার এ বিষয়ে জানছে। ওই সাংসদের ব্যাপারে আনা অভিযোগ সম্পর্কে কুয়েতের কাছ থেকে তথ্য পেলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

কুয়েতে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম সম্পর্কে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শুক্রবার এ মন্তব্য করেন।

কুয়েতের জেলহাজতে থাকা কাজী শহিদ দেশটিতে ব্যবসা পরিচালনায় সেখানকার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। যার ভিত্তিতে তাঁদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে কাজী শহিদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মূর্তজা মামুনকে। কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তারা সাংসদের বিরুদ্ধে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মুদ্রা পাচারের প্রমাণও পেয়েছেন।
সাংসদের বিষয়ে সরকার কী ভাবছে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা এখনো কুয়েতের কাছ থেকে সরকারিভাবে কোনো তথ্য পাইনি। পত্রিকায় যেসব তথ্য পেয়েছি, সরকারিভাবে কুয়েতের কাছ থেকে এসব তথ্য পেলে আইন অনুযায়ী অবশ্যই তাঁর বিচার হবে। এখন তথ্য না পেলে তো আমাদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

কুয়েতের সাংসদের অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনা দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দূতাবাসের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেব।’

কুয়েতের গণমাধ্যমগুলো অন্য দিনের মতো শুক্রবারও সাংসদ শহীদকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে আরব টাইমস-এর এক খবরে বলা হয়েছে, ভিসা-বাণিজ্যের নামে নির্বিঘ্নে মানব পাচারের জন্য নগদ ও চেকের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার পাশাপাশি কুয়েতের সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ উপঢৌকন দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কাজী শহিদ। এসব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছর তাঁর গড় লাভ ছিল ২০ লাখ দিনার (এক দিনারে ২৭৫ টাকা ৮৮ পয়সা হিসাবে সাড়ে ৫৫ কোটি টাকার বেশি)।

এদিকে আরবি দৈনিক আল কাবাসের এক খবরে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত কুয়েতের তিনজন সরকারি কর্মকর্তাকে জেরা করেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন হচ্ছেন সরকারের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের পরিচালক, অন্যজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত একজন কর্নেল। তাঁদের তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কাজী শহিদের দেওয়া ঘুষ তাঁরা পদস্থ একজন কর্মকর্তাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর ওই পদস্থ কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার মাধ্যমে তাঁরা কাজী শহিদকে ভিসা-বাণিজ্যে সহায়তা করতেন। ওই তিনজন প্রভাবশালী এক নারী ব্যবসায়ীও কাজী শহিদকে সহায়তা করতেন, যিনি নিজেও একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। বাংলাদেশের সাংসদের কাছ থেকে সুবিধাভোগী ওই ব্যবসায়ীকে তদন্ত কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছেন।