কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটা পড়ার শঙ্কা

কৃষ্ণচূড়াগাছগুলোর গা ঘেঁষে বসানো হচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি। এতে গাছগুলো কাটা পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গত সোমবার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে।  ছবি: প্রথম আলো
কৃষ্ণচূড়াগাছগুলোর গা ঘেঁষে বসানো হচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি। এতে গাছগুলো কাটা পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গত সোমবার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের পাশে লাগানো হয়েছিল সারি সারি কৃষ্ণচূড়াগাছ। এখন এর পাশেই বসানো হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি। এতে গাছগুলো কেটে ফেলা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

পরিবেশবাদীদের দাবি, রাস্তার পাশের কৃষ্ণচূড়াগাছের পাশ থেকে খুঁটিগুলো অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেওয়া হোক। গাছের ক্ষতি করে খুঁটি বসানোয় আপত্তি জানিয়েছে বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগও। তবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, গাছগুলো রক্ষা করেই বিদ্যুতের লাইন নেওয়া হবে।

 গত সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের বধ্যভূমির সামনে থেকে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) প্রবেশমুখ পর্যন্ত প্রায় অর্ধকিলোমিটার রাস্তার দুপাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানো। এই গাছগুলোর পাশে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুতের লাইন নেওয়ার জন্য খুঁটি বসিয়েছে। খুঁটিগুলোতে কিছুদিনের মধ্যে লাইন লাগানোর প্রস্তুতি চলছে।

লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল হক বলেন, এই সড়কটা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা। বধ্যভূমি, বিটিআরআই, চা–বাগান এসবের মাঝে এই রাস্তাটি। রাস্তার দুপাশের গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে আগামী বছরই ফুল ফুটবে। রাস্তা কৃষ্ণচূড়ার লালে রঙিন হয়ে থাকবে। যেভাবে বিদ্যুতের লাইন টানার জন্য খুঁটি বসানো হচ্ছে অবশ্যই কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো কাটা পড়বে। এত সুন্দর গাছগুলো নষ্ট হোক আমরা চাই না। পল্লী বিদ্যুৎ ইচ্ছে করলে অন্য জায়গা দিয়ে খুঁটি বসিয়ে লাইন নিতে পারে। রাস্তার দুপাশে খুঁটি বসানোর যুক্তি দেখি না।’

শ্রীমঙ্গল দ্বারিকা পাল মহিলা কলেজের প্রভাষক অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ভানুগাছ সড়কের বিটিআরআইয়ের সামনে একটি অনেক পুরোনো বটগাছ ছিল। বিদ্যুতের লাইনের কারণে প্রতিবছর গাছটি ছাঁটাই করতে করতে এটি আজ মৃতপ্রায়। এখন দেখা যাচ্ছে, কৃষ্ণচূড়া গাছের গা ঘেঁষে খুঁটি বসানো হচ্ছে। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের লাইন নিতে হলে রাস্তার পাশের চা–বাগানের ভেতর দিয়ে নিলেই হয়। তাতে গাছগুলোও কাটা লাগবে না। উন্নয়নের জন্য আমরা চাই না শ্রীমঙ্গলের এর সৌন্দর্য নষ্ট হোক।

মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এই গাছগুলো লাগানো হয়েছে। কৃষ্ণচূড়াগাছগুলোতে যখন ফুল ফুটবে তখন অনেক সুন্দর হবে রাস্তার দুপাশ। পল্লী বিদ্যুৎ হঠাৎ করেই কৃষ্ণচূড়ার গাছ ঘেঁষে বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর কাজ করছে এতে করে দেখা যাবে গাছ বড় হলেই সব কাটা পড়বে। তিনি মৌলভীবাজারের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে মৌখিকভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। গাছের পাশে খুঁটি বসাতে দেওয়া হবে না।

জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শিবু লাল বসু জানান, বৈদ্যুতিক এই লাইনটাকে আপডেট করা হচ্ছে। ওই লাইনটা সিঙ্গেল সার্কিট ছিল; এখন ৩৩ কেভির ডাবল সার্কিট করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলেছি, পাকা সড়কের গাছগুলো না কাটার জন্য। প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো একটু সরিয়ে যদি গাছগুলো রক্ষা করা যায়, আমরা তা-ই করব। আর যদি একান্তই খুঁটি না সরানো যায় তবে আরও উন্নত পদ্ধতির বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার ব্যবহার করে গাছগুলোকে রক্ষা করব।’