কে আপনার প্রিয় শিক্ষক, তাঁর সম্মাননার জন্য মনোনয়ন দিতে পারেন আপনিও
কারও জীবনে প্রাথমিকের কোনো শিক্ষকের টুকরো স্মৃতি জ্বলজ্বল করে। কেউ বললেন, হাতেখড়ি শেখার সময় মাটির স্লেট ভেঙে ফেলতেন, তাই প্রিয় শিক্ষক ধরিয়ে দিতেন টিনের স্লেট, যাতে আর না ভেঙে যায়। কেউ হয়তো পিএইচডি করার সময় প্রথমে ভুল বুঝে শিক্ষকের (সুপারভাইজার) প্রতি অভিমান করতেন। কিন্তু শেষ বেলায় সেই শিক্ষকের ভূমিকাই তাঁকে মুগ্ধ করে এখনো। আবার কারও জীবনে মা-ই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
জীবন গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা প্রিয় শিক্ষকদের স্মরণ করতে গিয়ে এমন অনেক টুকরো স্মৃতিচারণা করলেন এখনকার কয়েকজন শিক্ষক। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২১’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও সংস্কৃতি জগতের অনেকে তাঁদের প্রিয় শিক্ষকদের স্মরণ করেন।
প্রায় প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনোভাবে অবদান রাখা সেই সব প্রিয় শিক্ষককে এবার তৃতীয়বারের মতো সম্মাননা দেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ও প্রথম আলো। ২০১৯ সাল থেকে এই সম্মাননা দেওয়া শুরু হয়েছে। এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ছয়জন প্রিয় শিক্ষককে এই সম্মাননা দেওয়া হবে।
নিয়মানুযায়ী, মনোনীত শিক্ষকের বয়স কমপক্ষে ৪০ হতে হবে। আর প্রিয় শিক্ষক মনোনয়নকারীদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৮ বছর। অনলাইনে (www.priyoshikkhok.com) নির্ধারিত ফরম পূরণ করে এই মনোনয়ন দেওয়া যাবে। আজ শুরু হওয়া এই মনোনয়ন কার্যক্রম চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত।
এর আগে ২০২০ সালে ৯ জন এবং ২০১৯ সালে ১২ জন প্রিয় শিক্ষককে সম্মাননা দিয়েছিল আইপিডিসি ও প্রথম আলো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছোটবেলায় ছয় মাস পড়ানোর পরও প্রিয় শিক্ষক কোনো টাকা নেননি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষকের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষকদের কোনো দিন ভুলব না; যাঁরা সমস্ত জীবন উৎসর্গ করেছেন অন্যের জীবনকে ভালো করার জন্য।’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মফিজুর রহমান ছোটবেলার প্রিয় শিক্ষককে স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, তিনি হাতেখড়ির সময় মাটির স্লেট ভাঙতেন। কিন্তু তখন মৌলভি শিক্ষক টিনের স্লেট ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক শামসাদ মর্তুজা বলেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা মোমবাতির মতো জ্বলতে থাকি। কিন্তু আলোটা অন্যকে দিই।’
আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার মান ভালো করতে হলে শিক্ষকদের কাছে যেতে হবে। তাঁদের ভালো-মন্দের বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। তাঁদের সম্মান ও সম্মানী দিতে হবে। নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যবসায়িকভাবে সফল হওয়ার পাশাপাশি মানুষের জীবনে যেন ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়, সে জন্যই তাঁরা এ ধরনের বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনে কথা বলার প্রসঙ্গ টেনে চিত্রনায়ক ফেরদৌস বললেন, তাঁর কাছে মনে হয়েছে অনেক দিন পর যেন স্কুলের ক্লাসে ঢুকে পড়েছেন। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তিটা অনেক বড়। কারণ, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত সংস্কৃতিকে রাজনীতি থেকে এবং শিক্ষাকে বাণিজ্য থেকে দূরে রাখার আহ্বান জানান।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান করোনাকালে চিরবিদায় নেওয়া শিক্ষকদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, এই সংকটের মধ্যেও নতুন সম্ভাবনা এবং উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। করোনাকালে নতুন শিক্ষকদের পাশাপাশি প্রবীণ শিক্ষকেরাও অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান করিয়েছেন। এই অভিজ্ঞতাকে সামনেও কাজে লাগাতে হবে।
প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রথম আলো ভালো কাজগুলো অব্যাহত রেখেছে। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো আমরা সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম, উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও প্যারেরা, গতবার প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা পাওয়া ময়মনসিংহে অবস্থিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুলের শিক্ষক আফরূজ জাহান, প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মুনির হাসান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।