কে নেবে কপোতাক্ষ বাঁচানোর উদ্যোগ

নদে বর্জ্য পোড়ানোর জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
নদে বর্জ্য পোড়ানোর জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

মহেশপুর! দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। একসময় যাতায়াত ও ব্যবসার কাজে মানুষ এই নদ ব্যবহার করত। অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চলের খেজুরের গুড়ের সুনাম রয়েছে। ফলে ব্রিটিশ আমলে খেজুরের গুড় লন্ডন পর্যন্ত যেত, যার প্রধান যাতায়াত পথ ছিল এই কপোতাক্ষ নদ, এই নদী পথটি কলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাই কলকাতা শহরের সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য লঞ্চ, স্টিমার ইত্যাদি চলাচল করত নিয়মিত।

কপোতাক্ষ এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদ। যশোরের চৌগাছা থেকে উৎপত্তি হয়ে ২৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদ প্রধানত যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কপোতাক্ষ মৃতপ্রায়। মহেশপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা এ নদের কোথাও কোথাও পানি শুকিয়ে গেছে, কোথাও সরু খালের মতো পানি জমে আছে, আর সঙ্গে কচুরিপানার স্তূপ তো আছেই। একসময় এই নদে জোয়ার–ভাটা হতো, ছিল অনেক স্রোত, যা এখন সবই অতীত!

মূলত নদী দখল, নদী ভরাট, পলি জমা ইত্যাদির কারণে কপোতাক্ষের নদের চিরচেনা রূপ হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া বজ্র ফেলে দূষিত করা হচ্ছে নদের পানি। ফলে পানি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক গুণাগুণ, বিপন্ন হচ্ছে জলজ প্রাণী। কিন্তু এই নদ এ শহরকে করেছিল প্রাচুর্যময়। কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনকাজে ব্যবহার করা হতো নদের পানি।

কপোতাক্ষ জমির সঙ্গে মিশে গেছে। মহেশপুর, ঝিনাইদহ। ছবি: সংগৃহীত
কপোতাক্ষ জমির সঙ্গে মিশে গেছে। মহেশপুর, ঝিনাইদহ। ছবি: সংগৃহীত

সরকার ২০১১ সালে কপোতাক্ষ নদ খননের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এখনো কোনো আশার আলো দেখিনি এ অঞ্চলের মানুষ। হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে, প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের অন্তর্গত নদীগুলোর অবৈধ দখলের তালিকা তৈরি করে প্রকাশ করা। এর ফলে দখল হওয়া নদ-নদী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে, যা দখল হওয়া নদী উদ্ধারে সহায়তা করবে।

শুধু মহেশপুর নয়, সারা দেশের নদী দখলের মূল কারণ কৃষি আবাদ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়ি নির্মাণ। এ ছাড়া অপরিকল্পিত বাঁধ, কালভার্ট নির্মাণ ও নদীর স্রোত প্রবাহে বাধা তৈরি করে। এই ধরনের বিভিন্ন করণে কপোতাক্ষ আজ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রায় ৭০০ নদ-নদী বয়ে গেছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। অনেক নদী হারিয়ে গেছে মানচিত্র থেকে, কিছু হারানোর পথে। তাই সঠিক পদক্ষেপ না নিলে কবি মাইকেল মধুসূধন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত এই নদও একদিন হারিয়ে যাবে। দখল হওয়া অংশ উদ্ধার, গভীরতা বৃদ্ধিতে খনন কার্যক্রম চালানো, বর্জ্যনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা, নদে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি, পানির গুণাগুণ স্বাভাবিক রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে এ নদের হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু কে নেবে এ দায়িত্ব?
লেখক: শিক্ষক