ভোটার নম্বর জানতেন না সরওয়ার, গিয়েছিলেনও ভুল বুথে!

বাইরে থেকে নম্বর জানার পর ভোট দিচ্ছেন বরিশালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার। ছবি: সাইফুল ইসলাম
বাইরে থেকে নম্বর জানার পর ভোট দিচ্ছেন বরিশালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার। ছবি: সাইফুল ইসলাম

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির  মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার সকাল সাড়ে আটটার দিকে পশ্চিম কাউনিয়া এলাকার তাঁর বাসার কাছের সৈয়দা মজিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়  কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী ছিলেন। তাঁরাও কেন্দ্রে ঢোকেন। তিনি বুথে ঢুকে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে বলেন, তিনি তাঁর ভোটার নম্বর জানেন না।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোটার নম্বর ছাড়া ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। নম্বর এখন খুঁজে বের করা যাবে না।’

পরে সরওয়ারের সঙ্গে থাকা লোকেরা বাইরে গিয়ে ভোটার নম্বর নিয়ে আসেন। এতে দেখা যায়, কেন্দ্রের যে বুথে মজিবর রহমান সরওয়ার ভোট দিতে গিয়েছিলেন, ওই বুথের ভোটার তিনি নন। পরে কেন্দ্রের যে বুথের ভোটার, সেখানে গিয়ে সোয়া ১০টার দিকে গিয়ে ভোট দেন তিনি।

এর আগে সকালে কেন্দ্রে গিয়ে মজিবর রহমান সরওয়ার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘অর্ধশতাধিক কেন্দ্র থেকে তাঁর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ভোট হবে না।’

এ সময় মজিবর রহমান সরওয়ার অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁর ভোটার নম্বরের কার্ড আসার জন্য। কিন্তু বাইরে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী অনেকেই ‘জয় বাংলা’, ‘সরওয়ারকে বাইর কর’—স্লোগান দিতে থাকেন। ২০-২৫ জন ভোটকেন্দ্রে ঢোকার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়। এ সময় মজিবর রহমান সরওয়ার কেন্দ্রে আটকা পড়েন। বাইরে আরও লোক জড়ো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ এসে বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ারকে বের করে আনেন।

বাইরে বেরোলে অপেক্ষারত নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী লোকজন মজিবর রহমান ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘিরে ধরেন। তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন আওয়াজ তুলে সরওয়ারকে বের করার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা মজিবর রহমান সরওয়াকে গাড়িতে তুলে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের আজ সোমবার সকাল আটটায় ভোট শুরু হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৩ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের পর টানা ১৯ দিন প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১৩২ জন প্রার্থী। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী গত শুক্রবার রাত ১২টায় সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রচার-প্রচারণার পর্ব।

হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী এবার সিটি করপোরেশন এলাকায় ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। এই সিটি করপোরেশনের চতুর্থ নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে  ভোটকেন্দ্র ১২৩টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭৫০টি। এর মধ্যে ১১টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। আজকের নির্বাচনে ২০৩ জন স্থানীয় ও তিনজন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। নির্বাচন উপলক্ষে সিটি করপোরেশন এলাকার সব অফিস-আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

১২৩টি ভোটকেন্দ্রের ১১২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নগর পুলিশ।