কেমন কাটল করোনার ঈদ আনন্দ

প্রতি বছর ঈদ আসার বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু হয় ঈদ আনন্দ। বাস-ট্রেনে বাড়ি ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। টিভির পর্দায় ঈদ আয়োজন আর কিছুক্ষণ পর পর ‘স্বপ্ন টানে দিলাম পারি, অচিন পথে আপন ছাড়ি’ গান। মনের ভেতর হাজারো জল্পনা-কল্পনা চলত ঈদে এটা করব,ওটা করব।

এবার হঠাৎ করেই এক অজানা, অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি এসেছে, যে শুধু একটি শহর অথবা দেশেই অবস্থান করছে না, অবস্থান করছে পুরো বিশ্বজুড়ে। এই অতিথিকে নিয়েই মুসলিম সম্প্রদায় পালন করল এই বছরের দুটি ঈদ। ঈদ ঊল ফিতরে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ছিল না নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার সেই চিরচেনা দৃশ্য। ছিল না কোনো উৎসব আমেজের চিরাচরিত ঘটনা। তারপরেও বাড়ির ভেতর থেকেই যখন কিছু মানুষের এক সাথে হয়ে ঈদ করা দেখেছি তখন মনে হয়েছিল আহারে! এতটা সাহসী যদি আমরাও হতাম।

আবার ঈদ এসে হাজির হলে তখনো কোনো আশা ছিল না আনন্দ করার। তবে বাস আর লঞ্চে ছিল বাড়িফেরা মানুষের ভিড়। অন্য বছরের তুলনায় বেশ দেরি করেই বসে কোরবানির পশুর হাট। ঈদের দুই দিন আগের খবর, ‘ক্রেতাশূন্য পশুর হাট’ মন খারাপ করা খবর অবশ্যই। কেউ কোরবানি দেবে না! তারপর ঈদের একদিন আগে, ‘পশুর হাটে পশুর সংকট, খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতারা।’ ‘সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়েছেন পশু ব্যবসায়ীরা।’ ৬০ হাজার টাকার গরু বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকায়। এবার বুঝলাম মানুষ কোরবানি দেবে। যেহেতু কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানার তোয়াক্কাও করেনি তার মানে বাঙালির মধ্যে ভয় নেই।

ঈদ চলে এল, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শুরু হয়ে যায় মাস্ক-গ্লাভস ছাড়াই পশু কোরবানি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আর টিভির পর্দায় এসব দেখতে দেখতে ভাবছিলাম সব ঠিক থাকলে আমরাও এখন কোরবানির মাংস নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। না, না, ভাববার কোনো কারণই নেই যে কোরবানি দিইনি। দিয়েছি কিন্তু একটু ভিন্ন ভাবে।

যদিও সারাদিন অতীতের ঈদের স্মৃতিগুলো মনের দরজায় কড়া নাড়ছিল তারপরেও নিজেকে বলেছি, একটি বছরই তো মাত্র, পরের বছর মহান সৃষ্টিকর্তা চাইলে সব হবে। টিভিতে দেখছিলাম যাঁরা কোরবানি দিচ্ছে তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীনতা, তারপরেও সবাই খুশি নিজের পছন্দমতো কোরবানি দিতে পেরেছে।

এত গেল শহরের কথা এবার আসি গ্রামীণ ঈদের কথায়। গ্রামের মানুষ যদি একটু বন্যার পানি থেকে রেহাই পায় তবেই তারা ঈদ করতে পারে। এখন ঈদ করা যেন তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। কোনো একটা টিভি চ্যানেলে যেন দেখলাম, এক রিপোর্টার পানির মধ্যেই হেঁটে হেঁটে মানুষের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরছেন। এই পানির মধ্যে কতটা কষ্ট করে গ্রামের মানুষ বাস করছেন। এই পানির মধ্যেই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। যাদের খাবার পানি, থাকার জায়গার অভাব তারা ঈদ করার কথা ভাবতেই পারেন না।

দুই ঈদে দোয়া করা হয় বিশ্ববাসী যেন এই করোনা থেকে মুক্তি পায়। এই বছরের ঈদ তো শেষ, এবার? এবার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আবার আশায় বুক বাধি ইনশা আল্লাহ আগামী বছর আবার মনের মধ্যে ঈদের জন্য হাজারো জল্পনা কল্পনা চলতে থাকবে। আবার সবাই ঈদের নামাজ শেষে একে অপরকে কাছে টেনে নিবে, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে কোলাকুলি করবে। এবার না হয় একটি বছরই কোরবানি করলাম মানবজাতির কল্যাণে।

লেখক: শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি