কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবার চিত্র বদলাতে শুরু করেছে

কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সেবাদাতাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।

মোহাম্মদ শরীফ, জয়নাল হক,তৃপ্তি বালা ও আফরোজ মহল
ছবি: সংগৃহীত

বয়ঃসন্ধিকালে নানা সমস্যার মুখোমুখি হলেও এখনো সীমিতসংখ্যক কিশোর-কিশোরী যৌন প্রজনন–সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে। যৌন প্রজনন বিষয়ে আলোচনা করতে মা–বাবা ও শিক্ষকেরা এখনো অস্বস্তি বোধ করেন। তবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের ফলে অবস্থা বদলাতে শুরু করেছে। কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সেবাদাতাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল রোববার এক মতবিনিময় সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং অপরাজেয় বাংলাদেশ এই সভার আয়োজন করে।

কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে এবং যাতায়াতের পথে নির্দেশনা ও তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ড নিশ্চিত করতে হবে
তৃপ্তি বালা, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ২০১৯ সালের জুলাই থেকে প্রান্তিক তরুণদের জন্য ‘ওয়াই-মুভস’ নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের অধীনে দেশের ২৬টি কার্যকর কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ওপর সংস্থা দুটি ‘কমিউনিটি স্কোরকার্ড জরিপ’ পরিচালনা করে। স্থানীয় এনজিও ইয়েস বাংলাদেশের সহায়তায় ২০২১ সালের মে ও নভেম্বর মাসে এই স্কোরকার্ড জরিপ চালানো হয়।

স্কোরকার্ড জরিপে ৫৬৫ জন কিশোরী ও ৩১১ জন কিশোর অংশ নেয়। গতকাল জরিপের প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু) মোহাম্মদ শরীফ বলেন, এই স্কোরকার্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য জেলা ও উপজেলা কার্যালয় থেকে নজরদারিতে সহায়তা করবে। সরকার ৫৯২টি মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করছে, যেগুলোর আদলে পরবর্তী সময়ে আরও তৈরি করা হবে। এই কেন্দ্রগুলোতে কৈশোরবান্ধব সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। করোনা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে। যেখানে সাধারণ চিকিৎসাই নিশ্চিত করা কঠিন ছিল, সেখানে কৈশোরবান্ধব সেবা নিশ্চিত আরও বড় চ্যালেঞ্জ।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক জয়নাল হক বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা একটি নতুন সংযোজন। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়, তা অনেক ক্ষেত্রে কৈশোরবান্ধব নয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিচ্ছন্ন মাসিক ব্যবস্থাপনায় কিশোরীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর হোসেন বলেন, ১ হাজার ১০৩টি কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে উন্নত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর বিনা মূল্যে দেওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, তাদের জন্য আলাদা করে কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।

কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে আরও শক্তিশালীভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর আফরোজ মহল। তিনি বলেন, সরকার কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নতুন পদ সৃষ্টিসহ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। শিগগিরই ভোলা জেলায় কিশোর-কিশোরীদের পরিচ্ছন্ন মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করা হবে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক তৃপ্তি বালা বলেন, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে এবং যাতায়াতের পথে নির্দেশনা ও তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ড নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বাজেটের যথাযথ ব্যবহারের ওপর জোর দেন তিনি।

অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থাগুলোর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় দরকার। অপরাজেয় বাংলাদেশের মাধ্যমে কিশোরীরা স্বল্প খরচে স্যানিটারি ন্যাপকিন বানিয়ে ব্যবহার করছে, এটি বড় আকারেও করা সম্ভব।

স্কোরকার্ডের একটি হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের জন্য সামাজিক স্কোরকার্ড এবং আরেকটি হলো কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার স্কোরকার্ড।

স্কোরকার্ড ফলাফলের ওপর সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট নিলুফার নার্গিস। তাতে বলা হয়, জেলা ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস থেকে সেবাকেন্দ্রের নজরদারি বেড়েছে। কেন্দ্রের বিশ্রামাগার, নিরাপদ ও সুপেয় পানি এবং মেয়ে ও ছেলেদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারীরা। তবে ঢাকার মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী, নওগাঁ, ঝালকাঠির মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। একই চিত্র দেখা যায় কক্সবাজারের বাহারছড়া, যশোরের সাগরদাঁড়ি, কুড়িগ্রামের বারুবাড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকল্যাণ কেন্দ্রেও।