কোনো সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামকে হেফাজত করতে পারে না: শেখ সেলিম

আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ শেখ সেলিম
ফাইল ছবি

হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর হতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি দলের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি বলেছেন, কোনো সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামকে হেফাজত করতে পারে না।

আজ শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ সেলিম এসব কথা বলেন। শেখ সেলিম বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনালে দ্রুত সেসবের বিচার করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে যেসব মাদ্রাসা থেকে রাস্তায় বের হয়ে ‘মানুষকে হত্যা, বাড়িঘর ও স্থাপনায় আক্রমণ’ হয়েছে সেসব মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া এবং ২০১৩ সালের ৫ মের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল দাবি করে শেখ সেলিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর জন্য অনেক কিছু আমরা সহ্য করে গেছি। আর কোনো কিছু সহ্য করা হবে না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

একটি ছবি দেখিয়ে শেখ সেলিম বলেন, ‘এই জঙ্গিরা তলোয়ার নিয়ে ঘোড়ার ওপর উঠে পেছনে শত শত জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং স্থাপনাকে ধ্বংস করার জন্য তাণ্ডব চালিয়েছে। ছবি দেখে মনে হচ্ছে প্রাচীনকালের মতো কোনো যুদ্ধে যাচ্ছে।’

শেখ সেলিম বলেন, তাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ তালেবান রাষ্ট্র নয়। এটা পাকিস্তান নয়। সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান নেই। সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করে, তারা বাংলাদেশের শত্রু, তারা জনগণের শত্রু।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ইসলাম ধ্বংস করে না। কোনো সন্ত্রাসী জঙ্গিরা ইসলামকে হেফাজত করতে পারে না। ইসলাম হেফাজত করবে আল্লাহ।

সেলিম বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি, তারা সুন্দর অনুষ্ঠানটি কলঙ্কিত করার জন্য চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিএনপি-জামায়াত, স্বাধীনতাবিরোধী হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারীতে তাণ্ডব চালায়। ২৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, রেললাইনে আগুন দেয়। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীত একাডেমি, এসপি অফিস ও থানায় আগুন দেয়। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল পর্যন্ত তারা ভাঙচুর করে এবং আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা প্রেসক্লাবে আগুন দেয়। ১১ জন সাংবাদিককে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন শোভনের বাড়িতে আগুন দেয়। এ ছাড়া সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী বায়তুল মোকাররম, বসুন্ধরা এবং ৩০০ ফিট রাস্তার বিভিন্ন স্থানের স্থাপনায় আগুন দেয় ও গাড়ি ভাঙচুর করে।

২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ সেলিম বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে বিভিন্ন স্থানে বিনা কারণে কী তাণ্ডব করেছিল। সেদিন খালেদা জিয়া বিএনপিকে হেফাজতের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা বায়তুল মোকাররমে মসজিদে আক্রমণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ করে। এরা স্বাধীনতাবিরোধী। ইসলামবিরোধী, জঙ্গি। এরা রাষ্ট্রের শত্রু। দেশের শত্রু। এদের কোনো ছাড় দেওয়া যেতে পারে না।

বিএনপি ২৪ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি স্থগিত করার সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা স্বাধীনতার কর্মসূচি বন্ধ করতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত এরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। বিএনপি ২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধে যায়নি। কারণ তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।
হেফাজতের সঙ্গে বিএনপিতে জড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিএনপির সাংসদেরা প্রতিবাদ জানান। সেলিম বলেন, ‘ব্যস্ত হয়েন না। আমি শেষ করি। একটাও উত্তর দিতে পারবেন না। আমি কোনো অসত্য কথা বলিনি।’

শেখ সেলিম বলেন, নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে সবার আগে অভিনন্দন জানান খালেদা জিয়া। বিএনপি অফিসে মিষ্টি বিতরণ করছিল তারা।

২০১৬ সালে মোদির বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরে শেখ সেলিম বলেন, ‘২০১৬ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। খালেদা জিয়া ৭ জুন সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন। বিগলিত হাসি দিয়ে হ্যান্ডশেক করেন। তখন মোদি ভালো ছিলেন। এখন সেই মোদি খারাপ হয়ে গেলেন। এর ভেতর কী গোলমালটা হয়েছে? কেন খারাপ? এমন কী হলো, তা দেশবাসী জানতে চায়।’